আর দিন কয়েক পরেই শুরু হবে রহমতের মাস রমজান। রমজান শুরুর আগেই রোজা পালনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান আসার আগেই রোজা পালনের প্রস্তুতি ও কিছু আমল সম্পন্ন করতেন। রমজানের সুখবর দিতেন। সে প্রস্তুতি ও আমলগুলো কী?
Advertisement
শাবান মাসের আমলরমজানের আগের মাস শাবান। প্রতি ১১ মাস পরপর রমজানের আগমন ঘটে। এ মাসে টানা ৩০ দিন রোজা পালনের আগে শাবান মাসে রোজা রাখার শারীরিক ও মানসিক প্রস্ততি গ্রহণ করা বিশ্বনবির সুন্নাতি আমল। বিশ্বনবি শাবান মাসে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিতে রোজা পালন করতেন। হাদিসে এসেছে-- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো এমনভাবে রোজা পালন করতেন যে, আমাদের মনে হতো, তিনি রোজা ত্যাগ করবেন না। আর কখনো এত দীর্ঘ সময় রোজা ত্যাগ করতেন যে, আমাদের মনে হতো তিনি আর রোজা পালন করবে না। রমজান মাস ব্যতিত তাকে আমি পূর্ণ কোনো মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। আর শাবান মাসের তুলনায় অন্য কোনো মাসে এতো রোজা পালন করতেও দেখিনি।’ (বুখারি)
শাবান মাসে রোজা রাখার কারণশাবান মাসে রোজা রাখা কি শুধু শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিই ছিল নাকি অন্য কোনো হেকমতও ছিল? এ ব্যাপারে এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ওঠে এসেছে ওলামায়ে কেরামের গবেষণায়। কেউ কেউ বলেন-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি মাসে তিনদিন রোজা পালন করতেন। আর শাবান মাসে অন্য মাসের তুলনায় বেশি রোজা রাখতেন।
হজরত ওসামা বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! শাবান মাসে আপনি যে পরিমাণ রোজা পালন করেন, অন্য মাসে এতাটা পালন করতে দেখি না।
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস হওয়ার কারণে মানুষ শাবান মাসের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। এ এমন মাস, যে মাসে রবের কাছে আমল তুলে ধরা হয়। আর আমি চাই, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমলগুলো তার কাছে পেশ করা হোক।’ (নাসাঈ)
কেউ কেউ বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্ত্রীগণ রমজানের কাজা (ভাংতি) রোজাগুলো এ মাসে পালন করতেন। এ জন্য তিনিও তাদের সঙ্গে রোজা রাখতেন।’ (ফাতহুল বারি)
- হজরত আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রোজা সম্পর্কে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরপর তিনি বললেন-‘শাবানের তুলনায় অন্য কোনো মাসে আতি তাকে এতো অধিকহারে রোজা রাখতে দেখিনি। তিনি শাবান মাসের কয়েকদিন ব্যতিত প্রায় পুরো মাসই রোজা রাখতেন।’ (মুসলিম)
রমজান আগমনের সুসংবাদ দেওয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে সাহাবায়ে কেরামকে রমজানের প্রস্তুতি নিতে নানাভাবে উৎসাহিত করতেন। রমজানের আগমনের সুসংবাদ দিতেন। নিজেদের সর্বস্ব নিয়োগ করে রমজানের কল্যান আহরণে পরামর্শ দিতেন। হাদিসে এসেছে-- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, যখন রমজান মাস আসে, তখন আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে আবদ্ধ করা হয় শৃঙ্খলে।’ (বুখারি)
Advertisement
- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবন্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা থাকে না। আর খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো, বন্ধ করা হয় না তার একটি দরজাও। একজন আহ্বানকারী ঘোষণা দিতে থাকেন-হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও। আর যে অকল্যাণের প্রত্যাশী, বিরত হও। আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতেই জাহান্নাম থেকে অনেক মানুষকে মুক্তি দেবেন।’ (তিরমিজি)
- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বরকতময় মাস রমজান তোমাদের দরজা উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। এ মাসে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজা। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক এমন একটি রাত দেওয়া হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো; সে বঞ্চিত হলো (মহাকল্যাণ থেকে)।’ (নাসাঈ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। জান্নাতি আবহে শয়তানের প্ররোচনামুক্ত পরিবেশে কল্যাণের কাজে অগ্রসর হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। মাসব্যাপী রোজা পালনে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে রোজা পালন করা। যেভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন এবং প্রস্তুতি নিতে বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। আর বেশি বেশি এ দোয়াগুলো পড়া-- اَللَّهُمَّ بَلِّغْنَا رَمَضَانَউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রমজান কবুল করুন।’ রমজান পর্যন্ত আমাদের হায়াত দিন। রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পেতে আমাদের রমজানে পৌছে দিন।
রমজান আসতে এখনও বেশি কিছুদিন বাকি। ছোট্ট এ দোয়াটির পাশাপাশি শাবান মাসজুড়ে এ দোয়াটিও বেশি পড়া যেতে পারে-- اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের মহাকল্যাণ অর্জনে নিজেদের প্রস্তুত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস