ধর্ম

বিয়ে দেওয়ার আগে মেয়েদের মতামত নিতে হবে কি?

বিয়ে একটি স্থায়ী সম্পর্ক। সমাজে একটি বিষয় পরিলক্ষিত হয় যে, নারীর কোনো সম্মতি বা মতামত না নিয়েই অপরিচিত ছেলের কাছে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীর মতামত বা সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়ার কি বৈধ? বিয়ের আগে নারীর মতামত সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?

Advertisement

‘হ্যাঁ’ বিয়ের আগে নারীর মতামত নেয়া জরুরি। মতামত বা সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া হলে সে নারী চাইলে বিয়ের আকদ বা চুক্তি করতে পারবে। এ সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

যে নারীকে বিয়ে দেওয়া হবে সে কুমারি হোক কিংবা তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা হোক সবার ক্ষেত্রেই বিয়ে দেয়ার আগে মতামত নেওয়া বা অনুমিত গ্রহণ করা আবশ্যক। যিনি বিয়ের অভিভাবক হবেন তার জন্য অবশ্যই নারীর কাছ থেকে বিয়ের আগে অনুমতি বা মতামত গ্রহণ করা জরুরি। কোনো নারীর মতামতের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাত্রস্থ করা বা বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়।

আবার যদি কোনো নারীর অনুমতি ও সম্মতি ছাড়াও তার বিয়ে দেওয়া হয় তবে সে নারী চাইলে তার বিয়ের আকদ বা চুক্তি বাতিল করতে পারবে। এ বিয়ে বাতিলের অধিকার রাখে নারী। একাধিক হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত।- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সায়্যিবাহ (আগে বিয়ে হয়েছে এমন তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা) বিবাহিতা নারীর মতামত বা সম্মতি গ্রহণ ছাড়া তার বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার অনুমতি ব্যতিতও বিয়ে দেওয়া যাবে না।’ তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, কুমারী নারীর অনুমতি আবার কিভাবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তার চুপ থাকাই অনুমতি।’ (বুখারি ও মুসলিম)

Advertisement

কোনো নারীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হলে অনেক সময় লজ্জায় নারী কোনো কথা না বলে চুপ থাকে। নারীর এ নীরবতাকেই সম্মতি বলে ধরে নেয়া হবে। আর কোনো নারী যদি প্রস্তাবে রাজি না থাকে তবে তার প্রস্তাব বাতিল করার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার অধিকার আছে। সে কারণেই প্রস্তাব পছন্দ না হলে ইসলামের রীতি অনুযায়ী বিষয়টি সরাসরি জানিয়ে দেওয়াই উত্তম।

- হজরত খানসা বিনতে খেজাম আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, তিনি একজন বিবাহিতা (আগে বিয়ে হয়েছিল এমন) নারী ছিলেন। তার বাবা তার অনুমতি ছাড়াই তাকে (পুনরায়) বিয়ে দেন। আর তিনি এ বিয়েকে অপছন্দ করেন। হজরত খানসা রাদিয়াল্লাহু আনহা বিষয়টি নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলে তিনি (বিশ্বনবি) তার বিয়েকে বাতিল করে দেন।’ (বুখারি)

- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয়ই কুমারী মেয়েরা লজ্জা করে বা লজ্জাশীল হয়। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, (বিয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর) তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার সম্মতি।’ (বুখারি)

হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী যাকে বিয়ে দেওয়া হবে সে কুমারি কিংবা তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা হোক উভয়ের ক্ষেত্রেই বিয়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই অনুমতি, মতামত বা সম্মতি নিতে হবে। নতুবা চাইলে ওই নারীর পরে এ বিয়ে বাতিল করে দিতে পারবে।

Advertisement

নারী-পুরুষ কারো সম্মতি বা অনুমতি না ছাড়া অভিভাবক একজনকে অপরজনের সঙ্গে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া মোটেও ইসলামের মূলনীতি নয়। বরং তা কুরআনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আল্লাহ তাআলা বলেন-হে ঈমাণদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহণ করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও। কিন্তু তারা যদি কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নারীদের সম্পদ বা মোহরের ব্যাপারে যেমন জোর প্রয়োগ করা যাবে না। তেমনি নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রেও অনুমতি না নিয়ে জোর করা যাবে না। বিয়ের আগে নারীর অনুমতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। তাই কোনোভাবেই অনুমতি বা সম্মতি নেয়া ছাড়া কাউকেই বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এতে দাম্পত্য জীবনে কলহ ও ভাঙ্ঘন আসতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। অবশ্যই বিয়ে দেওয়ার নারীদের অনুমতি নেয়ার তাওফিক দান করুন। অনুমতি বা সম্মতি গ্রহণ করে সুন্নাতের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস