করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় গত সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এতে কর্মস্থলমুখী মানুষ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে। এ ভোগান্তি নিরসনে বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
Advertisement
লকডাউনেও গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দোকানপাট খোলা হচ্ছে কি-না তা নিয়ে ধোঁয়াশায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) থেকে তারা সীমিত পরিসরে শপিংমল ও দোকানপাট খুলতে চান। এখন সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে উৎকণ্ঠায় দিন পার করা ব্যবসায়ীরা।
এদিকে এরই মধ্যে এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। চিঠিতে তারা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ক্ষুদ্র, পাইকারি, খুচরা মার্কেট ও দোকান সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখার অনুরোধ করেছেন।
চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, গত বছরের (২০২০ সাল) লকডাউনে তারা ৬-৭ হাজার কোটি টাকার পুঁজি হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ২০-২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। বড় ধরনের ক্ষতির পরও করোনার মধ্যে ক্ষুদ্র, পাইকারি, খুচরা মার্কেট ও দোকানিরা দেশ ও জাতির স্বার্থে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ব্যাপারে তাদের মানসিক প্রস্তুতি ছিল।
Advertisement
এতে ব্যবসায়ীরা আরও উল্লেখ করেন, কিন্তু এ বছর ক্ষুদ্র, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা রমজান ও ঈদ উপলক্ষে কিছুটা ব্যবসার আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করেছেন। অথচ হঠাৎ করেই লকডাউনের ঘোষণায় ফের ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সীমিত পরিসরে ব্যবসা করার সুযোগ না দিলে পুঁজিসহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বেন।
এদিকে লকডাউন ঘোষণার পর টানা তিনদিন ধরে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। তারা নির্দিষ্ট সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন।
ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামনে বাংলা নববর্ষ, রমজান ও ঈদ। এসব উৎসব ঘিরে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা যদি না ওঠে তাহলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়ার দাবি তাদের।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দোকান খুলে দেয়ার বিষয়ে এখনও কোনো আশ্বাস পাইনি। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীকে একটি এসএমএস দেয়ার চেষ্টা করব। যেহেতু সবই খোলা আছে, এমন পরিস্থিতিতে শতভাগ লকডাউনে যাওয়া উচিত বলে মনে করি না।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এমনিতেই শেষ, তারপর এখন আরও বেশি শেষ হয়ে যাবে। পাইকারি ব্যবসার মোক্ষম সময় এখন। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা যদি মালামাল কিনতে না পারেন, তাহলে খুচরা বাজারের পণ্যের দাম বাড়বে। এতে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পুঁজি নষ্ট হবে। সেটা আরও ভয়ঙ্কর।’
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘একটা মাসের (রমজান ও ঈদ) জন্য আমরা বছরের ১১ মাস বসে থাকি। পুরো বছরের বিনিয়োগও করা হয় এই একটা মাসের জন্যই। কাজ তো সারা দিনরাত চলে। কিন্তু আমাদের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ এই একটা মাস।’
তিনি আরও বলেন, “আগামী ৭ দিন যদি পাইকারি ব্যবসা চালু করতে না পারি, তাহলে ব্যবসা ধ্বংস হবে। পাইকারি ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়লে নিচের সারির ব্যবসাও ধ্বংস হবে। পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে। কারণ বাজারে মালামাল থাকবে না। কথাগুলো আমরা মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলেছি। এমনকি আজ পুলিশের আইজি-এর সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমাদের দুঃখ কষ্টের কথা বলেছি সবাইকে। উনারা আশ্বস্ত করছেন না তাও না। তারা বলছেন, ‘আমরা কথা বলছি, মিটিং করছি, আপনাদের জানাবো’। ফলে আমরা ধোঁয়াশায় রয়েছি।”
সংক্রমণ বাড়ায় গত সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে সরকার। এর আওতায় নিত্যপণ্য-ফার্মেসি (ওষুধের দোকান) ছাড়া সব ধরনের শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
আইএইচআর/এএএইচ/এমএস