করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণার পর রাজধানীর নিম্নআয়ের কয়েক লাখ মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এবার লকডাউনে সংস্থা দুটির মধ্যে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এতে রাজধানীর নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে।
Advertisement
ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে গত বছরের ২৬ মার্চ প্রথম লকডাউন শুরু হয়। তখন অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত বাসিন্দাদের মাঝে খাবারের অভাব দেখা দেয়। তখন ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে দরিদ্রদের তালিকা তৈরি করে প্রতিটি ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ত্রাণে ১২ কেজি চাল, সাত কেজি আটা, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি তেল, দুই কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি মসুর ডাল ছিল। তখন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম আরও সহজ করার জন্য হটলাইন চালু করেছিল ডিএসসিসি। সেই হটলাইনে ফোন দিয়ে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও ত্রাণ গ্রহণ করেছিল।
ওই বছর ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডেও একইভাবে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল। এভাবে কয়েক ধাপে এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নিজ উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন। তখন ঢাকার দুই সিটি করপোরশনের এই উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল।
এবার করোনা সংক্রমণ গত বছরের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাই ফের সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। গত সোমবার (৫ এপ্রিল) প্রথম দিনের মতো সারাদেশে লকডাউন চলছে। এতে ঢাকা শহরের নিম্নআয়ের মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের ভরণ-পোষণ মেটানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
Advertisement
এর মধ্যে কর্ম হারানোর আশঙ্কায় নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মার্কেটের কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দাবিতে গত রোববার এবং সোমবার বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ হয়েছে মঙ্গলবারও।
নিউমার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন আরিফ হোসেন। তিনি জানান, মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে তিনি এই দোকানে কাজ করেন। এই টাকা দিয়েই সংসারের খরচ চালান তিনি। কিন্তু লকডাউনের পর দোকান মালিক ঘোষণা দিয়েছেন, যত দিন লকডাউন থাকবে ততদিন বেতন দেয়া হবে না। তাই তারা মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। অন্যথায় পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
করোনার সংক্রমণ রোধে গতকাল সোমবার থেকে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন
ডিএসসিসির উপ-সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং কয়েকটি বিদেশি সংস্থার পক্ষ থেকে ডিএসসিসির প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছিল। তারা এসব খাদ্যপণ্য স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিতরণ করেছেন। তবে এবার এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে তাদের কাছে কোনো দিক নির্দেশনা আসেনি।
Advertisement
করোনার সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন, বন্ধ দোকান-পাট
বনানী এলাকায় রিকশা চালান সোহেল রানা। প্রতিদিন তার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু সোমবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত তার আয় হয়েছে মাত্র ২৭০ টাকা। সোহেল বলেন, লকডাউনের কারণে সড়কে যাত্রী নেই। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে নিয়মিত ত্রাণ সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
করোনার সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন, বন্ধ গণপরিবহন
জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ডিএনসিসির পক্ষ থেকে অসহায় দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছিল। এবারও লকডাউন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আজ (সোমবার) লকডাউনের প্রথম দিন গেল। আর দুই-একদিন দেখে পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব। এই বিষয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি-না জানার চেষ্টা করব।
এমএমএ/এমআরআর/এইচএ/জেআইএম