দেশজুড়ে

মোহন মিয়ার ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়ার ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন।মরহুম মোহন মিয়া জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সাধারণ মানুষের কাতারে সারাজীবন রাজনীতি করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন। নিজে জমিদার হয়েও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনে শরীক, স্কুল, মাদ্রাসা, মেয়েদের শিক্ষার জন্য মহিলা মাদ্রাসা, স্টুডেন্টস হোম, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বায়তুল আমান ভোকেশনাল প্রজেক্ট স্থাপন করে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী মোহন মিয়া ১৯৫২ সালে দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা প্রকাশ করে তৎকালীন সুধী সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মোহন মিয়া স্মৃতি সংসদ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ফরিদপুর শহরে ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে মসজিদে মিলাদ মাহফিল, কুরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠান, ফরিদপুর মুসলিম মিশনে বাদ ফজর কুরআন-এ পাক ও কলেমা শরীফের খতম ও দোয়া মাহ্ফিল এবং বিকেল ৩টায় মোহন মিয়া স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ময়েজ উদ্দীন হাই স্কুল মাঠে মরহুমের বর্ণাঢ্য জীবনীর উপর আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া কানাইপুরের বিভিন্ন মসজিদ ও জুট ফাইবার্সে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।কিং মেকার ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়া : তিনি একজন রাজনীতিবিদ। তার বাবার নাম ময়েজউদ্দীন বিশ্বাস। জমিদার পরিবারে তার জন্ম। ফরিদপুর ঈশান ইনস্টিটিউশনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। স্কুলের ছাত্র থাকাকালে সারা ভারতব্যাপী চলছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন। সেই আন্দোলনের প্রভাবে লেখাপড়া ছেড়ে সমাজসেবা ও রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহণ করেন মোহন মিয়া। ১৯২২ সালে ফরিদপুরে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান “খাদেমুল ইসলাম” প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন।১৯৩৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। এর আগে ১৯২৬ এ ফরিদপুর পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ এ মুসলিম লীগের মনোনয়নে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য ও ১৯৩৮ এ ফরিদপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।১৯৪৬ এ বঙ্গীয় বিধান সভার নির্বাচনে ফরিদপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ১৯৪১ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি, ১৯৪১-১৯৪৭ পর্যন্ত বঙ্গীয় মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সালে পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫২ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন।১৯৫৩ সালে মুসলিম লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন। একই বছরের ২৭ জুলাই এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে কৃষক-শ্রমিক পার্টি গঠন করেন। ১৯৫৭-১৯৫৮ পর্যন্ত এই পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪-তে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন।১৯৫৪ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকার ৯২-ক ধারা প্রয়োগ করে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলে মোহন মিয়া গ্রেফতার ও কারাবরণ করেন। ১৯৫৫ সালে কৃষক-শ্রমিক পার্টির মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণ-পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৫৭ সালে ‘যুক্ত-নির্বাচন’ প্রথার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। সোহরাওয়ার্দীর মন্ত্রিসভা পার্লামেন্টে ‘যুক্ত-নির্বাচন বিল’ (১৯৫৭) উত্থাপন করলে সেই বিলের প্রতি সমর্থন প্রদান এবং ভোট প্রয়োগ করেন। পার্লামেন্টে বিলটি গৃহীত হয়। ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী মৃত্যুসংক্রান্ত ব্যাপারে সরকার-কর্তৃক তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার হন।একই বছর দেশে সামরিক আইন জারি করে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে মামলা প্রত্যাহার ও তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিস ফ্রন্ট এবং ১৯৬৭-১৯৭১ পর্যন্ত কাইয়ুম মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৯৭০ এর জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে ফরিদপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজয় বরণ করেন।১৯৫২ সালে ঢাকায় বাংলা দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা (অধুনালুপ্ত) প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম জাগরণের পথিকৃত ও সমাজ সংস্কারক মরহুম ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়া ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল­াহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)।মরহুম ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়া আজীবন রাজনীতি করেছেন, সামান্য কয়েক মাসের মন্ত্রীত্ব ছাড়াও কোনো সরকারি পদ গ্রহণ করেন নাই।এস.এম. তরুন/ এমএএস/বিএ

Advertisement