ধর্ম

হজরত ঈসা (আ.)-এর রোজা পালন

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। সব যুগেই নবি-রাসুলগণের প্রতি রোজা বিধান ছিল। পৃথিবীর শুরু থেকেই নবি-রাসুলগণ রোজা পালন করেছেন। হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের পর আসমানি কিতাবধারী বিশিষ্ট নবি ছিলেন হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম। তাঁর যুগে এবং তাঁর জন্মের আগেও রোজা বিধান প্রচলনের প্রমাণ পাওয়া যায়। কুরআনের বর্ণনায় তা প্রমাণিত-

Advertisement

فَقُولِي إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَنِ صَوْمًا فَلَنْ أُكَلِّمَ الْيَوْمَ إِنسِيًّا

‘তবে বলে দাও, আমি আল্লাহর উদ্দেশে রোজা মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলব না।’ (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৬)

এ আয়াতে হজরত মারইয়ামের রোজা রাখার দ্বারা প্রমাণিত যে, হজরত ঈসা আলাইহিস সালামও রোজা পালন করতেন। আগের যুগে রোজার প্রচলন ছিল বলেও কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট বর্ণনা ওঠে এসেছে-

Advertisement

‘হে ঈমাদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমারে আগের লোকদের (নবি-রাসুল ও তাদের উম্মত) ওপর। যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের রোজা

হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম রোজা পালন করতেন। তিনি জঙ্গলে বা বনে ৪০ দিন রোজা পালন করেছেন। নিজেকে আসমানি কিতাবের ধারক হিসেবে তৈরি করতে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম কিতাব আসার আগে দীর্ঘ ৪০ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছিলেন।

৪০ দিন রোজা পালনের পর আল্লাহ তাআলা হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানি গ্রন্থ ইঞ্জিল দান করেন। আর খ্রিস্টান ধর্মে এখনও রোজা রাখার প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে।

Advertisement

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের সঙ্গীরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে- ‘আমরা পবিত্র আত্মাকে কিভাবে বের করব? উত্তরে তিনি বলেছিলেন- তা দোয়া এবং রোজা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে তা কখনো বের হতে পারে না।’

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের রোজা সম্পর্কে সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী উল্লেখ করেছেন যে-

‘হজরত মুসা আলাইহিস সালামের যুগে যে রোজা ফরজের পর্যায়ে ছিল ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের রোজার ব্যাপারে নতুন করে কোনো বিধিনিষেধ দিয়ে যাননি। তিনি শুধু সিয়ামের নীতি ও কিছু নিয়ম বর্ণনা করেছেন এবং তার ব্যাখ্যা ও সমন্বয়ের ভার গির্জাওয়ালাদের ওপর ছেড়ে দেন।

খ্রিস্টীয় ২য় থেকে ৫ম শতকের মধ্যে খ্রিস্টানদের রোজার নিয়ম-কানুন তৈরির বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। ওই সময় ইস্টারের আগে দুইদিন রোজা রাখার জন্য নির্দিষ্ট ছিল। ওই দুইটি রোজাই অর্ধেক রাতে এসে শেষ হতো। আর ওই দিন যারা অসুখে থাকতো; তারা শনিবার রোজা পালন করতে পারতো।

খ্রিস্টীয় ৩য় শতকে রোজার দিন নির্দিষ্ট করা হয়। সে সময় আবার ইফতারের সময় নিয়েও মতভেদ ছিল। কেউ মোরগ ডাক দিলে ইফতার করতো। আবার অন্ধকারে খুব ছেয়ে গেলে ইফতার করতো।

আবার খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে এসে ৪০টি রোজা পালনের তথ্য পাওয়া যায়। রোমানদের রোজা, আলেকজান্দ্রিয়া লাসানদের গির্জাগুলো রোজা দিন নির্দিষ্ট করে। কিন্তু রোজা নিয়মাবলী ও বিধিনিষেধ রোজাদার  ব্যক্তির বিবেক ও দায়িত্বানুভূতির ওপর ছেড়ে দেয়া হয়।

তবে ইংল্যান্ডে ষষ্ঠ এর্ডওয়াড ও প্রথম ইলিজাবেথের যুগে তাদের দেশে রোজার সময় গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করে। তার এর কারণ হিসেবে বর্ণনা করেন যে- ‘মাছ শিকার ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের বিষয়ে উপকৃত হওয়া একান্ত দরকার।

যুগে যুগে রোজা পালনের ধরণ যেমনই হোক না কেন, ইসলাম দিয়েছে রোজার সুন্দর প্রচলন। ঘোষিত হয়েছে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার উপায়। কুরআনুল কারিমের ঘোষণায় তা প্রমাণিত। রমজানের রোজা হোক সবার জন্য কল্যাণের।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানের রোজার প্রস্তুতি এখন থেকেই নেয়া। বিশেষ করে এ শাবান মাসের রোজা রাখার মাধ্যমেই সে প্রস্তুতি শুরু করা উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবুয়ত ও রেসালাতের অন্যতম আদর্শ রোজা পালনে নিজেদের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। রমজানজুড়ে  রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস