ধর্ম

ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসির আমলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

আল্লাহর নামে শুরু করা মুমিনের প্রতিটি কাজই ইবাদত। ঘুমও এর মধ্যে একটি। ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসির রয়েছে কার্যকরী আমল ও বিশেষ মর্যাদা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার বিশেষ মর্যাদা ঘোষণা করেছেন। কী সেই ফজিলত ও মর্যাদা?

Advertisement

আল্লাহর নামে ঘুমও একটি শান্তিময় ইবাদত। ঘুমের সঙ্গে আরও অনেক ইবাদত জড়িত। তন্মধ্যে এটি আয়াতুল কুরসির আমল করে ঘুম যাওয়া। আর এতে ফেরশতারা সারারাত ওই ব্যক্তির জন্য নিরাপত্তার দোয়া করতে থাকেন। হাদিসের দীর্ঘ এক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-‘যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে। তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’

হাদিসের পুরো বর্ণনাটি এমনহজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার দেখতে পেলেন একজন ব্যক্তি সাদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরে বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব।’ তখন ওই ব্যক্তি বলল যে, সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন। তাই দয়াবশত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে ছেড়ে দিলেন ।

পরদিন সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘গতকাল অপরাধীকে কী করেছে?’

Advertisement

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারও আসবে।

এভাবে ওই চোর পরপর ৩দিন সাদকার মাল চুরি করতে আসে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাকে প্রত্যেকবার ছেড়ে দেন। সর্বশেষ সে (ওই চোর) আয়াতুল কুরসির আমলের কথা বর্ণনা করে বলে-

আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব; যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা জানতে চাইলে (ওই) চোর বলল-‘রাতে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’

Advertisement

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা শুনে বললেন, ‘যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তুমি কি জান সে কে?’ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘না’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সে হচ্ছে শয়তান।’ (বুখারি)

উচ্চারণসহ আয়াতুল কুরসি

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُআল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। [ সুরা বাকারা ২:২৫৫ ]

শুধু তা-ই নয়-আয়াতুল কুরসি কুরআনের অন্যসব আয়াতের সর্দার বা নেতা। আয়াতটি যে ঘরে পড়া হবে, সে ঘর থেকে শয়তান বের হয়ে যাবে।’এছাড়া আয়াতুল কুরসী অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ একটি আয়াত। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী কুরআন মাজীদের সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ আয়াত এটি।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঘুমের আগে নিয়মিত আয়াতুল কুরসির আমল করা। সুন্নাতের আলো জীবন পরিচালনা করা। আর এতে মুমিনের জীবন হবে শান্তিময়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসির আমল যথাযথভাবে নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস