বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করার দাবিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
জনস্বার্থে রেজিস্ট্রি ডাকের মাধ্যমে সোমবার (৫ এপ্রিল) আইনজীবী শাম্মী আক্তারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেআর খান রবিন এই নোটিশটি পাঠান। আইনজীবী জেআর খান রবিন নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে প্রতিকার চাওয়া হবে বলেও জানান নোটিশদানকারী আইনজীবী।
লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে, সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিব এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
আইনজীবী শাম্মী আক্তারের পক্ষে জনস্বার্থে পাঠানো নোটিশের বিষয়ে আইনজীবী মো. জেআর খাঁন রবিন বলেন, করোনাকালীন সময়ের জন্য সরকারী ও বেসরকারী কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে ১ বছর করাসহ এই ছুটির বিষয়ে বৈষম্য দূরীকরণে সরকারকে এই আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) চীনের ওহান শহরে উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এ ভাইরাস সারা পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও এ ভাইরাসের আওতামুক্ত নয়। এ ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং এক জনগোষ্ঠী থেকে অন্য জনগোষ্ঠীতে খুব সহজে সংক্রমিত হয়। এর প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও প্রতিনিয়ত মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও কষ্টদায়ক বটে। বাংলাদেশ সরকার এর কু-প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছেন। যা প্রসংশার দাবিদার বটে।
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের নারীরাও কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। উল্লেখ্য, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, শিক্ষামন্ত্রীও সম্মানীত নারী। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে অনেকেই বিচারপতি, বিচারক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন পদে রয়েছেন। কর্মজীবী নারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।’
এতে বলা হয়, ‘বর্তমান করোনাভাইরাসের কারণে গর্ভবতী নারীদেরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলের (পার্ট-১) রুল ১৯৭(১) সংশোধনক্রমে সরকারী কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। কারণ, গর্ভবতী মা এ ভাইরাস কর্তৃক আক্রান্ত হলে তার গর্ভের শিশুসহ পরিবারের সকলেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে। এতে করে একটি পরিবার পুরোপুরি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে।’
Advertisement
‘একটি সুষ্ঠ সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকাও অগ্রগন্য উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, নারীরা নানাভাবে সম্মানিত। তাই তারা আরো সম্মানিত ও সুবিধা ভোগ করার অধিকার পাওয়ার হকদারও বটে। অথচ এমন মাতৃত্বকালীন ছুটির নিয়ম অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মানছেই না। এতে করে সরকারী ও বেসরকারী কর্মজীবী নারীদের মধ্যে বৈষম্য বিদ্যমান। করোনা মহামারির মধ্যে সরকারী ও বেসরকারী কর্মক্ষেত্রে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানোসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে সরকারী ও বেসরকারী কর্মজীবী নারীদের মধ্যে বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে সরকার সংশ্লিষ্টরা কোনরকম পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেয়নি।’
তাই নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে করোনাকালীন সরকারী ও বেসরকারী কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসের পরিবর্তে ১ বছর করার জন্যে বলা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশ। পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে সকল কর্মজীবী নারীদের মধ্যে বৈষম্য অবসান করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতেও বলা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এফএইচ/এসএস/জেআইএম