জাতীয়

এ কেমন লকডাউন

‘বইমেলা খোলা থাকবে, অফিস আদালতও খোলা, এখন কেউ যদি আমাকে বলে যে আমি বইমেলায় যাবো বা আমি অফিসে যাচ্ছি, তাহলে লকডাউন বাস্তবায়ন করবো কীভাবে? এ কেমন লকডাউন বুঝি না, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে হাস্যকর লকডাউন।’

Advertisement

লকডাউনের প্রথমদিন সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে কর্তব্যরত এক পুলিশ সার্জেন্ট অনেকটা আক্ষেপের সুরে এসব কথা বলছিলেন।

তার পাশ দিয়ে তখন সাই সাই আওয়াজ তুলে দ্রুতবেগে চলে যায় অসংখ্য প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, রিকশা, পিকআপভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতিও স্বাভাবিক দিনের চেয়ে খুব কম নয়। এ চিত্র দেখে বিন্দুমাত্র বোঝার উপায় নেই যে আজ থেকে সাত দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে।

লকডাউনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। কাঁচাবাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচা-কেনা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

Advertisement

লকডাউন কেমন চলছে তা সরেজমিনে দেখতে গিয়ে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দেখা যায়, রাজধানীর শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েলচত্বর, হাইকোর্ট, সচিবালয়, জিপিও, জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্যভবন, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, পলাশী, কাঁটাবন, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ধানমন্ডি এবং কলাবাগান এলাকার রাস্তাঘাটে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি।

কেন বের হয়েছেন জানতে চাইলে তাদের কেউ অফিস, কেউ বাজারে, কেউ হাসপাতাল আবার কেউবা লকডাউন কেমন চলছে তা দেখতে বেরহওয়াসহ নানা প্রয়োজনের কথা বলেন।

রাস্তাঘাটে বিভিন্ন রুটের দু’চারটি গণপরিবহন ছাড়া বেশিরভাগ গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। খুব বেশি সংখ্যায় না হলেও কিছুসংখ্যক সরকারি বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাস চলতে দেখা যায়। তবে রাস্তাঘাটে অসংখ্য প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, জিপ, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। রাস্তায় আজও পথচারীদের অনেককে মাস্ক পরিধান না করেই ঘুরতে দেখা গেছে।

টিএসসির সামনে একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা জানান, লকডাউন থাকলেও বইমেলা খোলা থাকছে, তাই বাড়িতে না গিয়ে ঢাকাতেই থেকে গেছেন। বাড়ি গেলে এক টাকাও আয় হবে না, বইমেলায় কম করে হলেও প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হবে। এ আশাতেই লকডাউনের মধ্যে সকাল সকাল চলে এসেছেন।

Advertisement

জিপিও মোড়ের সামনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ বলেন, ‘গত এক বছরেরও বেশি সময় যাবৎ করোনা মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখতে দেখতে এখন সহ্য হয়ে গেছে। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এখন আর মানুষ ঘরে থাকতে চাইছে না। যত কড়াকড়িই করুক না কেন মানুষ লকডাউন মানতে চাইবে না। তবে তার ব্যক্তিগত মতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামিয়ে কঠোরভাবে আগামী ১৫ দিন লকডাউন বাস্তবায়ন করলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।

সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় সাত হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত ও অর্ধশতাধিক মৃত্যু হয়েছে। এক মাস আগেও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল হাজারেরও নিচে। মৃত্যু সংখ্যাও ছিল অনেক কম। এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে।

এমইউ/ইএ/এমকেএইচ