গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক দফার সাধারণ ছুটিতে ব্যাপক অর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। গত পহেলা বৈশাখ, ঈদে বেচা-বিক্রি কম হওয়াতে এবার আশার বীজ বুনেছিলেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় চলতি বছর প্রথমবারের মতো সপ্তাহব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।
Advertisement
করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। রোববার (৪ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘করেনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার থেকে এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’ পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী লকডাউন চলাকালে শুধু জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। আর শিল্পকারখানা খোলা থাকবে, যাতে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন শিফটে কাজ করতে পারেন।’
তবে আকস্মিক লকডাউনের ঘোষণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার সব ব্যবসায়ীর চোখ ছিল সামনের পহেলা বৈশাখ আর ঈদের দিকে। এজন্য অনেকেই ব্যাংক কিংবা অন্যভাবে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। এমন অবস্থায় লকডাউনের এমন সিদ্ধান্তে তারা হতবাক। তারা কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
Advertisement
এ প্রসঙ্গে পাটজাত পণ্যের ব্র্যান্ডশপ তুলিকার স্বত্বাধিকারী ইসরাত জাহান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘লকডাউনের খুব খারাপ প্রভাব পড়বে। তবে লকডাউনের ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। আমাদের তো ফ্যাক্টরি খোলা রাখতে হবে। সামনে ঈদ আসছে। এভাবে যদি লকডাউন হয়, তাহলে আমাদের ওয়ার্কার আসবে কোথা থেকে। কীভাবে কী করবো, বুঝতে পারছি না আসলে।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউন আমরা অ্যাপ্রিশিয়েট করি না। এই লকডাউন কতদিন চলবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।’
আরেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হাসিনা মুক্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘লকডাউনের খবর তো আশঙ্কার। এবার আমাদের একটা ধারণা ছিল যে গতবার ঈদে কেনাকাটা কম হয়েছে। এবার একটু ভালো হবে। সেই আশা থেকে এবার অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অনেক বিনিয়োগ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ঋণ করে বিনিয়োগ হয়েছে, এসময় লকডাউনটা আমাদের মাথায় বাড়ি পড়ার মতন। তবে আমরা তাকিয়ে আছি সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে। কেননা যে ইনভেস্ট করার তা আমরা করেই ফেলেছি। এখন যদি ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে একটা আশা থাকে।’
Advertisement
ক্রেতাদের প্রতি দেশি পণ্য কেনার অনুরোধ জানিয়ে এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘ক্রেতারা যদি বিদেশি পণ্য না কিনে দেশি পণ্য কেনেন তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আমরা পণ্য ক্রেতাদের বাড়ি পৌঁছে দেব। তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেব। দেশি পণ্য কেনার মানসিকতা যদি তৈরি হয়, তাহলে আমাদের কিছুটা উপকার হবে ‘
তিনি বলেন, ‘এই ঈদটা যদি আমাদের মাটি হয়, তাহলে ছোট উদ্যোক্তারা আর দাঁড়াতে পারবেন না।’
এসএম/ইএ/জিকেএস