আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশকেই বেশি নিরাপদ ভাবেন রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা ধান কাটার কাজ, রিক্সা চালানোসহ নানান ধরণের কায়িক শ্রম দিয়ে জীবন যাপন করছেন। স্থানীয় লোকেদের অনেকে মনে করেন, রোহিঙ্গারা কম দামে বা সস্তায় শ্রম বিক্রি করে, সে কারণে তাদের কাজ পেতে সমস্যা হয় না।কম দামে শ্রম বিক্রি করে পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও রোহিঙ্গারা তাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশকেই নিরাপদ মনে করেন। কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প এবং বসতি এলাকা ঘুরে তাদের এমন বক্তব্যই পাওয়া গেছে।কক্সবাজারের উখিয়ার রাস্তায় দেখা হয় রিক্সা চালক আবুল সিদ্দিকের সাথে। বয়স ষাটের ঘরে এসেছে। বয়সের ছাপ পড়েছে চেহারায়।সাত বছর আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্য রোহিঙ্গাদের সাথে দল বেঁধে নাফ নদী পারি দিয়ে মিয়ানমার থেকে উখিয়ায় এসে উঠেছিলেন।সেই থেকে রিক্সা চালিয়ে চলছে তাঁর জীবন।তিনি বলছিলেন,“স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ সাতজনের সংসার আমার আয়ের উপরই চলে। রিকসা চালিয়ে আমি মালিককে ৭০টাকা দেয়ার পর ৬০/৭০ টাকা থাকে, সেটা দিয়েই আমার সংসার চালাতে হয়। মিয়ানমারের জুলুমের জ্বালায় এখানে আসি। এখানে রিক্সা চালালে কেউ বাধা দেয় না।”কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের পাশে অনিবন্ধনকৃত একটি শিবিরে দেখা যায়, পাহাড় এবং জঙ্গল কেটে থাকার জায়গা করা হয়েছে ২০০৭ সালের দিকে। বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে জড়ো করে সেই শিবিরে রাখা হয়েছে।পলিথিনের ছাউনি আর মাটির ছোট ছোট ঘরের সারির একটিতে পাঁচজন ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন রিক্সা চালক আবুল সিদ্দিক। ছোট্ট সেই ঘরের পাশেই তাঁর স্ত্রীকে মাটির চুলায় রান্না করতে দেখা যায়। সেখানে তিনি বলছিলেন, “মিয়ানমারে আমার জায়গা-জমি সব কেড়ে নিয়েছে। সেখানে জীবন চালানোর মতো কিছু ছিল না। তাই নিরাপত্তার জন্য এখানে এসে দুঃখ কষ্টে জীবন চালাচ্ছি।”এই শিবিরে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে সদস্য সংখ্যা হবে সাত থেকে এগার-বার জন পর্যন্ত। পাশের নিবন্ধনকৃত শিবিরে শিশুদের লেখাপড়া এবং রেশনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকলেও এখানে তার কিছুই নেই। শিবিরটিতে রোহিঙ্গা পুরুষদের পাশাপশি শিশুরাও কমদামে শ্রম দিয়ে জীবন চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।কেউ কেউ মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করছেন।তাদের একজন চার বছর ধরে কুতুপালং এ একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে চার হাজার টাকা মাসিক বেতন পান এবং তা দিয়েই তার সাত সদস্যের সংসার চলে।কুতুপালং এ শিবিরগুলোর পাশের একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেছেন, শিবির কেন্দ্রীক এলাকাগুলোর বাইরে গোটা কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোহিঙ্গারা কায়িক শ্রম বিক্রি করছে। কম দামের এই শ্রমের কদরও রয়েছে। তিনি বলছিলেন, “পুরুষরা যেমন দিনমজুরের কাজ করে। শিশুরাও হোটেল বয়সহ বিভিন্ন কাজ করে। রোহিঙ্গা নারীরা গ্রামে বাড়ি বাড়ি গৃহাস্থলীর বা গৃহকর্মীর কাজ করে।এভাবে এরা সমাজে মিশে যাচ্ছে।”নাফ নদীর তীরের একটি গ্রামে নয় বছর আগে বসত গড়েছেন মোছা: জহুরা। সন্তানদের নিয়ে নয়জনের সংসারে তাঁর স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি নিজেও গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করেন। তিনি বলছিলেন, “গ্রামে জমিতে ধানের বীজ লাগানোসহ বিভিন্ন কাজ করি।স্থানীয় মানুষের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজও করি। দিনে কাজ থাকলে আশি টাকা পাই।”এখন ধান কাটার বা দিন মজুরের মৌসুম যখন থাকে না, সেই সময়টাতে রোহিঙ্গাদের কাছে রিক্সা চালানোটাই বড় সম্বল হয়ে দাঁড়ায়। দিনমজুর মোহাম্মদ হোসেন এখন রিক্সা চালাচ্ছেন উখিয়ার রাস্তায়। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, তিনি রোহিঙ্গা হলেও রিক্সা চালানোর ব্যাপারে বা কোন কাজ করার ক্ষেত্রে এখানকার গ্রামের মানুষ বা কেউ বাধা দেয় না। মিয়ানমারের মতো নির্যাতনের ভয় নেই। এখানে কষ্ট করে চললেও পরিবার নিয়ে অন্তত রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। খবর: বিবিসি বাংলা

Advertisement