ওমর ফারুক হিমেল
Advertisement
নিয়তি মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ জানে না। নিয়তি আর মানুষের পরিকল্পনা যোজন-যোজন ফারাক। পৃথিবীর সব কিছু নিজস্ব সূত্র মেনে চলে। প্রকৃতির নিয়মটাই ভারসাম্য আর নিরবচ্ছিন্ন সূত্রে গাঁথা। যেমন আমার নিয়তিতে প্রবাস জীবন। জৌলুসের প্রবাসে আমার মনটা পড়ে থাকে দেশ আর পরিবারের কাছেই।
এই মুহূর্তে আমি স্বদেশে। পরিবার নিয়ে দারুণ সময় কাটাচ্ছি। ইচ্ছে আছে কয়েকমাস কাটানোর। আর এই সময়ের মধ্যে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব রমজান, ঈদ, কোরবানী পরিবার নিয়ে দেশে করার সুযোগটা এবার হয়ে যাচ্ছে।
এতে মনের ভেতরটায় আনন্দ বন্যা যে বইছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সঙ্গে কিন্তু চিরচরিত কিছু অযৌক্তিক ও অমানবিক বিষয়ের মুখোমুখি হওয়ার দুশ্চিন্তাও কাজ করছে।
Advertisement
সামনে আসছে রমজান, সিয়াম, সাধনার সেরা মাস। কিন্তু এরই মধ্যে দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম, প্রিয় স্বদেশের চিরাচরিত নিয়ম। কদিন আগে পরিবার নিয়ে বাজারে গিয়ে আঁচ পেয়েছি দ্রব্যমূর্ল্যের ঊর্ধ্বমুখীর ঝাঁজ।
বিশ্বের আধুনিক দুটি দেশে ১১ বছরের প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতায় মনে শুধু প্রশ্ন জাগে, ‘রমজানে জিনিসের দাম দেশে বাড়ে, প্রবাসে বাড়ে না কেন’, যখন রমজানে মুসলিমা দেশগুলো পণ্য ছাড়ের প্রতিযোগিতায় নামে।
রমজান মাস এলেই দেশে বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজানকে টার্গেট করে সবকিছুর দাম রাখে আকাশচুম্বী। কিন্তু বিপরীত চিত্র মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো। আর বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব অন্যদেশগুলোতে কমানো হয় নিত্যপণ্যের দাম।
যেমনটি আমার আগের প্রবাস দক্ষিণের কোরিয়ার উদাহরণ দেয়া যায়। কোরিয়ার ধর্মীয় উৎসবগুলোতে দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়ে না, বরং দাম হ্রাস করে। দেশটিতে ১০ বছরের প্রবাস জীবনে কখনও কালোবাজারির অস্তিত্ব দেখিনি। কারণ দাম বাড়িয়ে মানুষকে জিম্মি করা কোরিয়ানদের মজ্জাতেই নেই।
Advertisement
শুধু কোরিয়ায় নই, ইউরোপেও তাই। উৎসবের আগে তো বিশেষ ছাড় ইউরোপের দেশগুলোতে রেওয়াজ, রীতিতে পরিণত হয়েছে। আমার বর্তমান প্রবাস জার্মানির কথাই যদি বলি, করোনাকালে স্বচক্ষে দেখলাম বড়দিন উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য ছাড়।
গত ডিসেম্বরে বড়দিনে প্রবাসী ছোট ভাই বললেন মোবাইল লাগলে যেন কিনে ফেলি, আমি বললাম পরে নেব। ভাই জানালেন এই রকম মূল্য ছাড় উৎসবে ছাড়া আর পাব না।
আর রমজানে তো মুসলিম দেশগুলো বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ব্যবসায়ীরা তো রীতিমত প্রতিযোগিতায় নামেন কে কত কম দামে জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারেন। চাল, মাছ, মাংস, থেকে শুরু করে চিনি, তেল, দুধ, ময়দাসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম নেমে আসে অর্ধেকে।
বড় বড় চেইন শপ, সুপার মার্কেট থেকে শুরু কর ছোট ছোট দোকানেও ছাড়ের হিড়িক পড়ে। পত্রপত্রিকায়, গণমাধ্যমে ছাড়ের বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশপাশি মানুষের বাড়ি পর্যন্ত বিলি করে লিফলেট।
আকর্ষণীয় ছাড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন আরবি আর প্রবাসীরা। কোনো কোনো পণ্যে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে রমজান উপলক্ষে ৯০ ভাগ পর্যন্ত ছাড়ের রেকর্ড আছে।
সৌদিতে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা কথা পত্রিকার খবরে দেখেছি। সবচেয়ে আর্শ্চযের বিষয় হলো সরকারি নির্দেশনার চেয়ে ব্যবসায়ীরা নিজে দাম কমানোর প্রতিযোগিতায় নেমে যান।
শুনেছি মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা নাকি অস্বাভাবিক কম দামের জন্য রমজানের বাজার থেকে দেশে নিয়ে আসার জিনিষপত্র কিনে রাখেন। সৌভাগ্যবান তারা।
শুধুু মুসলিম দেশ নয়, আমাদের কাছের দেশ থাইল্যান্ডেও রমজান মাস উপলক্ষে মুসলমানসহ সবার জন্য পণ্যে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করে। এছাড়া ফ্রান্সসহ অনেক দেশে মুসলমান ব্যবসায়ীরা রমজানে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে থাকে প্রতি বছর।
দীর্ঘকাল রমজান যেন বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো মাস, উৎসব! রমজানে নিত্যপণ্যের সঙ্গে বিশেষ কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর এ সুযোগে ঘাটতি না থাকলেও একশ্রেণির ব্যবসায়ী বাড়িয়ে দেয় পণ্যের দাম। শুধু কি জিনিসের দাম, ঘি, সেমাইসহ নানা পণ্যের ভেজালেও সয়লাব থাকে রমজানের বাজার।
এমআরএম/জিকেএস