আন্তর্জাতিক

করোনাকে অবহেলা নয়, সতর্কতা জরুরি

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশেই প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছেই। বার বার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করার পরেও সংক্রমণের গতি রোধ করা যাচ্ছে না।

Advertisement

প্রথম থেকেই বেশ কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বণ করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আরও কয়েক বছর হয়তো করোনা নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বণ করলে করোনা থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। বিশেষ করে ভ্যাকসিন গ্রহণের ওপর তারা বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন।

করোনার প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. ফাহিম ইউনুস সতর্ক করেছিলেন যে, আমাদের হয়তো মাসের পর মাস এই ভাইরাস নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। এটাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে তিনি আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, নিজেদের জীবনকে অপ্রয়োজনে কঠিন করে তোলা উচিত নয়। তার মতে, সুখে থাকা শিখতে হবে এবং বাস্তবতা মেনেই জীবন-যাপন করতে হবে।

Advertisement

প্রথমদিকে ধারণা করা হয়েছিল গ্রীষ্মে হয়তো ভাইরাসের সংক্রমণ কমতে পারে। কিন্তু এই ধারণাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ভারত, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে গ্রীষ্মেও সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে। গত কয়েক সপ্তাহে ব্রাজিলের অবস্থা বেশ শোচনীয়।

বার বার হাত ধোয়া, লোকজনের কাছ থেকে দূরে অবস্থান করা, অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া কমিয়ে সংক্রমণের গতি হয়তো কমানো যাবে কিন্তু ভাইরাস একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়।

কোভিড-১৯ ধর্ম, বর্ণ বোঝে না। এই ভাইরাস সব মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে। সাধারণ সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করেও শঙ্কামুক্ত থাকা যায়। সব সময় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে হবে এমনটা জরুরি নয়। কারণ এই ভাইরাস তো ব্যাকটেরিয়ার মতো নয়। এটা একেবারেই আলাদা।

আদা, সোডা, ভিনেগার মিশ্রিত পানি খেলেই যে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে তা নয়। হাতে গ্লাভস পরার বিষয়টিকেও অনেক বিশেষজ্ঞ ভুল বলছেন। তাদের মতে গ্লাভসের মধ্যেই ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে এবং মুখ বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে স্পর্শ লাগলে সেখানে ভাইরাস ছড়াতে পারে। এরচেয়ে বার বার হাত পরিষ্কার করাকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

Advertisement

করোনার সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর এবং শুকনো কাশি। এছাড়া থাকতে পারে শরীরের পেশীতে ব্যথা, গলা ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি না থাকা, শ্বাসকষ্ট, কখনো পেট খারাপ ও বমি বা বমি বমি ভাব।

চিকিৎসকরা মনে করেন, কেউ যদি নিজের মধ্যে এ রকম একাধিক লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে শুরুতেই ‘সেলফ আইসোলেশনে’ চলে যাওয়া উচিত। অর্থাৎ নিজেকে পরিবারের বাকি সদস্যদের কাছ থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলতে হবে।

এতে পরিবার, কর্মস্থল, এবং আশেপাশের মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাবে। সম্ভব হলে আলাদা একটি ঘরে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ ঘরের দরজার বাইরে রেখে যাবেন। এই ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৩ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৩০৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২৯ জন। এছাড়া ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ১০ কোটি ৫৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৮৭ জন।

টিটিএন/এএসএম