মানুষ বিনোদনের জন্য একসময় ভিড় করতো সিনেমা হলে। বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই। তবে সিনেমা হল না থাকলেও মোড়ে মোড়ে রয়েছে নামগুলো।
Advertisement
যশোরের ২২টি সিনেমা হলের মধ্যে টিকে আছে মাত্র ছয়টি। তাও এটি সরকারের হিসাব অনুযায়ী। বাস্তবে টিকে রয়েছে পাঁচটি।
যশোর জেলা তথ্য অফিসের মতে, চালু ছয়টি হল হলো- যশোর শহরের মণিহার কমপ্লেক্স ও তসবীর মহল, মণিরামপুরের পূরবী ও মধুমিতা, অভয়নগরের বর্ণালী এবং বাগআঁচড়ার ময়ূরী।
এ ছয়টির মধ্যে অভয়নগরের বর্ণালী ভেঙে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। তসবীর হল করোনার সময় বন্ধ হওয়ার পর আর চালু হয়নি। মণিহার টিকে থাকলেও ধুঁকে ধুঁকে চলছে অন্য তিনটি।
Advertisement
যশোর শহরের পাঁচটি সিনেমা হলের মধ্যে টিকে আছে মাত্র দুটি। এর মধ্যে শুধু চালু রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মণিহার কমপ্লেক্স।
৬৫ বছরের পুরোনো তসবীর সিনেমা হল টিকে থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ। বন্ধ হয়েছে চিত্রা, নিরালা ও মানসী হল। শুধু নামে রয়েছে চিত্রামোড় ও নিরালাপট্টি।
চলচ্চিত্র শিল্পে ধসের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি যেন কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে।
জানা যায়, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানার পাশে চিত্রা মোড় থাকলেও চিত্রা নামের সিনেমা হলটি নেই। ১৯৭৩ সালে স্থাপিত হলটি ৯ বছর আগে মালিকরা বিক্রি করেন। এরপর সেটি ভেঙে করা হয়েছে পাঁচতারকা হোটেল।
Advertisement
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নিরালা হল। এটি ২০০৯ সালে ভেঙে ফেলা হয়। সেখানকার জমি বিক্রি করা হয়েছে প্লট আকারে। আর নিরালাপট্টি এখন শুধুই একটি আবাসিক এলাকা।
১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মানসী সিনেমা হলটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
আর যশোরের ঐতিহ্যবাহী মণিহার কমপ্লেক্সটি ১৯৮৩ সালের ৮ ডিসেম্বর চালু হয়। চার বিঘা জমির ওপর নির্মিত এ সিনেমা হলের আসন সংখ্যা ১৪৩০টি। চার তলার এ হলটি পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আছে র্যাম সিঁড়ি, ঝরণা ও ঝাড়বাতি। এর স্থপতি ছিলেন কাজী মোহাম্মদ হানিফ।
মণিহার সিনেমা হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন, মূলত আমার বাবা সিনেমা হলটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় সিনেমার রমরমা অবস্থা থাকলেও পরিস্থিতি এখন বড়ই নাজুক।
তিনি আরও বলেন, বিগত দুই দশক ধরে সিনেমা ব্যবসায় মন্দা বিরাজ করছে। দেশে ভালো সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। তাই মানুষ হলে আসে না। তবে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে মানুষ ঠিকই আসবে।
দর্শক ফেরাতে প্রয়োজনে চলচ্চিত্র আমদানিও করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
যশোরের আরেকটি প্রাচীন সিনেমা হল তসবীর মহল। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলটির বয়স ৬৫ বছর। এ হলেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বি সরকার ঘূর্ণায়মান মঞ্চ।
মনিহারের পাশাপাশি টিকে থাকলেও এর অবস্থাও করুণ। করোনা মহমারিতে ২০২০ সালের মার্চে হলটি বন্ধের পর এখনও খোলেনি।
তসবীর মহলের কর্মী পলাশ কুমার দাস বলেন, করোনার আগেই হলে দর্শক হতো না। করোনার পর তো হলই বন্ধ। বাধ্য হয়ে হলের কর্মচারীরা অন্য পেশায় চলে গেছেন।
মণিরামপুরে কোনোমতে টিকে থাকা মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক মফিজুর রহমান বলেন, পুরানো সিনেমা দিয়ে হল চালু রেখেছি। কিন্তু দর্শকের অভাবে শো বন্ধ থাকে। এভাবে কতদিন হল চালাতে পারবো জানি না।
যশোরের সহকারী তথ্য কর্মকর্তা এলিন সাঈদুর রহমান জানান, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে হল মালিকদের সঙ্গেও তার কথা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে মানসম্মত সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। আর ঘরে বসেই মোবাইল ফোন, টিভি ও কম্পিউটারে সিনেমা দেখা যাচ্ছে। আবার পরিবেশ ভালো না থাকার কারণে অনেক হলে দর্শকরা যান না। এসব কারণে হলগুলো দিন দিন দর্শকশূন্য হয়ে পড়ছে।
চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রয়োজন বলেও তারা অভিমত দিয়েছেন।
মিলন রহমান/এসএমএম/এএসএম