জাতীয়

আইসিইউয়ের বাইরে ফ্লোর-বেঞ্চে বসে দিনরাত কাটে স্বজনদের

রাজধানীর একটি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সংলগ্ন ছোট্ট বারান্দার ফ্লোরে মাদুরের ওপর বেঘোরে পড়ে ঘুমাচ্ছেন দুই তরুণ। তাদের একজনের পরনে লুঙ্গি ও হাফ হাতা টিশার্ট, মুখে মাস্ক, আরেকজনের পরনে জিন্স ও হাফ হাতা টিশার্ট। আশেপাশে কয়েক জোড়া জুতা, বেঞ্চের উপর মেলে দেয়া গামছা, পানির বোতল, একাধিক সেট পিপিই, প্লাস্টিকের বল ও কাপড়ের পোটলা।

Advertisement

হঠাৎ একজন নিরাপত্তারক্ষী উচ্চস্বরে আইসিইউ বেডের রোগী আছেন, বলতেই দুই যুবকের একজনকে লাফিয়ে উঠে কয়েক সেকেন্ডে লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে আইসিইউ-এর দরজার সামনে দৌড়ে যেতে দেখা যায়।

উপস্থিত একজন নার্স হাতে একটি স্লিপ ধরিয়ে দিতেই ওই যুবককে দৌড়ে লিফটে নিচে নামতে দেখা যায়। যে যুবকটি কিছুক্ষণ আগে দৌড়ে ওষুধ ও ইনজেকশন আনতে গিয়েছিলেন, তিনি ফিরে এসে নার্সের হাতে ওষুধ ও ইনজেকশন তুলে দিয়ে এবার বেঞ্চিতে বসে হাঁপাতে থাকেন।

গত বুধবার (৩১ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর কেবিন ব্লকে করোনা রোগীদের জন্য আপাতত ব্যবহৃত সাততলার করোনা আইসিইউ-এর বাইরে এ প্রতিবেদকের চোখে এমন দৃশ্যে ধরা পড়ে।

Advertisement

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা সুমন ইসলাম নামের ওই যুবক জানান, তার ৭০ বছর বয়সী বাবা করোনায় আক্রান্ত। এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পালা করে ডিউটি করেন ভাইবোনেরা। আইসিইউ এর পাশে ছোট্ট ওয়েটিং রুমই এখন তাদের বাড়িঘর। কখনও শুয়ে কখনও বসে দিনরাত কাটে তাদের। দৃষ্টি থাকে আইসিইউ এর দরজার দিকে। কখন বাবার বিষয়ে খবর আসে সেই অপেক্ষায়।

শুধু সুমন একা নন, আইসিইউতে ভর্তি থাকা ১৬টি শয্যার প্রতিটি শয্যার মুমূর্ষু রোগীদের বাড়িঘর এখন আইসিইউ সংলগ্ন ছোট্ট বারান্দায়। চিকিৎসকদের পরামর্শেই রোগীর এক বা একাধিক স্বজন আইসিইউ-এর বাইরে অপেক্ষায় থাকেন। প্রায় সময়ই আইসিইউ থেকে বিভিন্ন ওষুধ ও ইনজেকশন কিনে আনতে স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হয়। এ কারণে সার্বক্ষণিক কাউকে না কাউকে অপেক্ষায় থাকতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান, করোনাকে সাধারণ রোগ ভেবে ঘরে বসে থাকা মোটেও ঠিক না। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্রই হাসপাতাল বা চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আইসিইউ বেডও সোনার হরিণ উল্লেখ করে তারা নানা তদবির করে আইসিইউ বেড পেয়েছেন।

বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, করোনা সেন্টারে ১৬টি আইসিইউ শয্যাসহ সর্বমোট ১৮৭টি শয্যা চালু আছে। গত ১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ কোভিড-১৯ এর ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিগগিরই সাধারণ শয্যা সংখ্যা আরও ৫০টি এবং আইসিইউর শয্যা সংখ্যা আরও ১০টি বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছেন।

Advertisement

গত বছরের জুলাই মাস থেকে বিএসএমএমইউ করোনা ইউনিট চালু করে। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট সাত হাজার ১১৫ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে চার হাজার ২৩৫ জনকে ভর্তি করা হয়। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৫৫৯ জনের মৃত্যু হয়।

এমইউ/এএএইচ/এএসএম