দেশজুড়ে

‘কবরী রোড’ ও ‘কখগঘঙ’ চুয়াডাঙ্গার অবিচ্ছেদ্য ইতিহাস

চুয়াডাঙ্গাবাসীর কাছে ‘কখগঘঙ’ শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, একটি ইতিহাস। ৭০-এর দশকের ব্যবসা সফল একটি রোমান্টিক চলচ্চিত্র ‘কখগঘঙ’। সম্পূর্ণ চুয়াডাঙ্গায় দৃশ্যায়িত এক সময়ের সাড়া জাগানো সামাজিক সিনেমা ‘কখগঘঙ’ সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম তেমন একটা ওয়াকিবহাল নয়। তবে চুয়াডাঙ্গা শহরে নায়িকা সারাহ বেগম কবরীর নামে নামকরণ হওয়া সড়কটি আজও আলো ছড়াচ্ছে।

Advertisement

ওই সড়কেরই ‘সেতাব মঞ্জিল’ নামের বাড়িতে ১৯৬৯ সালে শুটিং হয়েছিল ‘কখগঘঙ’ চলচ্চিত্র। এ বাড়িতেই অবস্থান করতেন অভিনেত্রী কবরী। সেই বাড়ি আর এই রাস্তা এখন এ শহরের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তবে এ সড়কে চলাচলের সময় বয়োজ্যেষ্ঠরা হয়তো মনে মনে রোমান্টিকতায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। মনের পর্দায় ভেসে ওঠে ‘কুটনী বুড়িকে’ নিয়ে মেঠো ও গেঁয়ো পথে নায়ক রাজ্জাকের গরুর গাড়ি হাঁকিয়ে যাওয়া, পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরা, নায়িকা কবরীর দুষ্টুমির অসাধারণ মিষ্টি দৃশ্য।

তৎকালীন পাকিস্তানের খ্যাতিমান পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ও অভিনেতা আনোয়ার হোসেন, নায়ক রাজ রাজ্জাক এবং অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী অভিনীত ‘কখগঘঙ’ চলচ্চিত্র ১৯৭০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রের পুরো দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এবং শহরের চিরচেনা ‘কবরী রোডে’।

Advertisement

শুটিংয়ের সময় ‘সেতাব মঞ্জিল’ নামের একটি বাড়িতে একমাস অবস্থান করেছিলেন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। তার নামানুসারে বাড়িটির পার্শ্ববর্তী সড়কের নামকরণ করা হয় ‘কবরী রোড’। চুয়াডাঙ্গায় হলে গিয়ে ছবি দেখার সংস্কৃতি অনেক আগেই বন্ধ হলেও ‘কবরী রোড’ আজও মনে করিয়ে দেয় সেই সময়কার কথা।

‘সেতাব মঞ্জিল’ নামের ওই একতলা ভবনটিতে গিয়ে সীমানা প্রাচীর পেরোতেই দেখা হয় হাস্যোজ্জ্বল আখের আলীর সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর ঘরের ভেতর থেকে চেয়ার এনে দিলেন বসার জন্য। তিনিও একটি চেয়ারে বসলেন। তারপর দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন। ১৫ বছর ধরে এই বাড়িতেই থাকেন আখের আলী। পেশায় তিনি পেঁয়াজু, পাপড় ও সিঙ্গারা বিক্রেতা।

ফরিদপুর জেলার নিজ বাড়ি থেকে ১৫ বছর আগে তিনি যখন চুয়াডাঙ্গা এসেছিলেন, তখন জানতেন না যে এখানে সিনেমার শুটিং হয়েছিল। পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সেটা জেনেছেন।

আখের আলী বাড়ির ভেতরের দিকের একটি কক্ষ দেখিয়ে জানালেন, এ কক্ষটিতেই অভিনেত্রী কবরী থাকতেন। শহরে কবরী রোডের কথা বললেই সবাই চেনে। চেনাতে হয় না। এটা খুবই ভালো লাগে।

Advertisement

তিনি আরও জানান, এ বাড়িটি অনেকেই ‘কবরী মেস’ নামেও চেনে। অনেক ছাত্র এই মেসে থেকে পড়ালেখা করেন। তবে করোনার কারণে একবছর ধরে মেসে কোনো ছাত্র নেই।

এ বাড়ির মালিক মোরশেদ আহমেদ তোকা মিয়া থাকেন ঢাকায়। প্রতিবেশীদের কাছে মোবাইল নম্বর না থাকায় বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি বয়স্কদের কাছে শুনেছেন, ওই সিনেমার সহকারী চিত্রগ্রাহক ছিলেন বাড়ির মালিক মোরশেদ আহমেদ তোকা মিয়া। চিত্রগ্রাহক ছিলেন প্রয়াত বেবী ইসলাম। দুজনে সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই।

তিনি আরও বলেন, ‘তখন কবরী খুব জনপ্রিয়। সবাই দেখতে আসত। বলত, কবরী কোথায় থাকে? লোকজন দেখিয়ে দিত, ওই যে ওই বাড়িতে। রিকশাওয়ালারা উৎসুক লোকজনকে নিয়ে আসত।’

স্থানীয় সাংবাদিক মাহফুজ মামুন বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা শহরের ব্যস্ততম একটি সড়ক কবরী রোড। জনপ্রিয় অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীর নামেই এ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। গ্রামের অনেক মানুষই এ বাড়িটি দেখতে আসেন।’

সালাউদ্দীন কাজল/এসআর/এসজে/এমএস