সংস্কৃতির জেলা হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, সঙ্গীত তাপসী অন্নপূর্ণা, বিখ্যাত ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণসহ অসংখ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ করেছেন এই জেলায়। এক সময় সাংস্কৃতিক চর্চায় মুখিয়ে থাকা এই জেলায় এখন আর চালু নেই কোনো সিনেমা হল। জেলার ৯টি উপজেলার সবগুলো সিনেমা হল বন্ধ রয়েছে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৯টি উপজেলায় ১৫টি সিনেমা হল ছিল। জেলা সদরে রূপশ্রী, চিত্রালয় ও রজনীগন্ধা নামের তিনটি, কসবার কুটিতে বসুন্ধরা ও অনুরাধা নামের দুটি, আখাউড়া পৌরসভা এলাকায় অনুরাগ ও মায়াবী নামের দুটি, আশুগঞ্জ বন্দরে মেঘনা ও বাজারে কোহিনূর নামের দুটি, নবীনগর পৌর এলাকায় নবীন ও মাজিকাড়া এলাকায় নূপুর নামের দুটি, বাঞ্ছারামপুরে সূর্যমুখী ও শিল্পী মিলন নামের দুটি, বিজয়নগরের চান্দুরায় তিতাস নামের একটি ও সরাইল বিডিআর ক্যাম্পের ভেতরে বিনোদন নামের একটি সিনেমা হল ছিল।
এসব সিনেমা হলগুলোতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ধাপে ধাপে শো চলত। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হলগুলো থাকত হাউসফুল। পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে যেতেন কর্তা ব্যক্তিরা।
কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সবকিছু। ভেঙে ফেলা হচ্ছে একের পর এক সিনেমা হল। সিনেমা হলের স্থলে নির্মিত হচ্ছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন।
Advertisement
সরেজমিনে জেলার আশুগঞ্জের নৌ-বন্দর এলাকায় মেঘনা সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যায়, শুধু স্থাপনাটি রয়েছে। সিনেমা হলটিকে বানিয়ে ফেলা হয়েছে কৃষি জমির সারের গোডাউন।
এ বিষয়ে মেঘনা সিনেমা হলের সত্ত্বাধিকারী ইকবাল আহমেদের ছেলে আবু জাফর হিমেল জানান, ১৯৮৭ সালে মেঘনা সিনেমা হলটি স্থাপন করা হয়েছিল। এতে দর্শকদের বসার প্রায় ৭০০ আসন ছিল। কাজ করত ১২ জন স্টাফ। দিন দিন সিনেমার গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দর্শক আসা একেবারেই কমে গেছে। পাশাপাশি তুলনামূলক ছবির দামও অনেক বেশি ছিল।
তিনি আরও জানান, ডিজিটাল যুগে বিগত কয়েক বছর যাবত সবাই অনলাইনে বাসায় বসে কম্পিউটারে সিনেমা দেখে। টানা তিন বছর লোকসানের সম্মুখীন হয়ে হলটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর স্টাফরাও নানান পেশায় জড়িয়ে গেছেন, জেলা শহরের রজনীগন্ধা সিনেমা হলে নতুন সিনেমা এলেই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পোস্টার লাগানোর কাজ ছিল প্রভু মালাকারের। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে বহুলতল আবাসিক ভবন। প্রভু মালাকারও পেশা বদল করে রিকশা চালিয়ে চলেন।
Advertisement
তিনি বলেন, যখন পোস্টার লাগাতাম তখন ভিন্ন আমেজ ছিল। এখন আর সেই আমেজ নেই সিনেমা হলগুলোর। মালিকরা তো আর লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে রাখবেন না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মুনির হোসেন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনেমা হল না থাকাটা খুবই বেদনার ও কষ্টের। মানুষ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয়ে এখন সবাই মোবাইল ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। যা সমাজের জন্য শুভ লক্ষ্মণ না। সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য সিনেমা হলগুলো চালু করা অপরিহার্য।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আগে অনেকগুলো সিনেমা হল ছিল। এখন এই শহরে একটি সিনেমা হলও নেই। ফলে এখানে ধর্মান্ধতা ক্রমশ উসকে উঠছে। আর তরুণরা মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো আবারও চালুর দাবি জানান তিনি।
এফএ/এমএস