ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একেকজন ভিন্ন ভিন্ন ডায়েট চার্ট মেনে চলেন। এভাবেই অনেকে ভুল ডায়েট মেনে ওজন কমানোর বদলে আরও বাড়িয়ে ফেলেন। একসময় এর প্রভাব পড়ে শরীরে। দীর্ঘসময় ধরে শরীর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান না পেয়ে নানা রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। এজন্য ডায়েট করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
Advertisement
বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ধরনের ডায়েটের নাম শুনেছি যেমন- অ্যাটকিনস ডায়েট, ভেগান ডায়েট, কেটজেনিক ডায়েট, রও ফুড ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ডায়েট, রেইনবো ডায়েট ইত্যাদি। সবগুলো ডায়েটের বিশেষ কিছু উপকারী দিক আছে। বর্তমানে ড্যাশ ডায়েটেও অনেক উপকার মিলছে বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী ডায়েট হলো ড্যাশ। এ ডায়েটের মাধ্যমে ওজনও কমবে সঙ্গে সারবে দীর্ঘমেয়াদী নানা রোগ। মার্কিন চিকিৎসকরা বলছেন, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে ড্যাশ ডায়েট। এ ছাড়াও রক্তচাপ হ্রাস, ওজন কমানোসহ ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমানো যায় এ ডায়েটের মাধ্যমে। কারণ ড্যাশ ডায়েট চলাকালীন কম চর্বি, চিনি ও লবণযুক্ত খাবারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
DASH হচ্ছে ‘ডায়েটারি অ্যাপ্রোচেস টু স্টপ হাইপারটেনশন’। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ বন্ধের খাদ্যতালিকা। আমেরিকান ন্যাশনাল হার্ট, ফুসফুস এবং রক্ত ইনস্টিটিউটের মতে, এনআইএইচ সমর্থিত ড্যাশ ডায়েট উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যও উন্নত রাখে।
Advertisement
হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব মেডিসিনের মতে, ১৯৯৬ সালে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি সভায় ড্যাশ ডায়েটকে পরিচিত করা হয়। পরে ১৯৯৭ সালে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে ড্যাশ ডায়েট সম্পর্কিত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
যেভাবে কাজ করে ড্যাশ ডায়েট
রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে খাবার কীভাবে কাজ করে? এ বিষয় পরীক্ষা করার জন্য গবেষকরা ৪৫৬ জনের উপর সমীক্ষা চালায়। এক্ষেত্রে তারা ৩টি ডায়েট তাদের ওপর বাস্তবায়ন করেন। একটি হলো, স্ট্যান্ডার্ড আমেরিকান ডায়েট। অন্যটি ফল এবং উদ্ভিজ্জ ডায়েট এবং শেষটি ফল-মূল, শাক-সবজি, বাদাম এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধযুক্ত খাবারে কম পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এমন খাদ্য।
সর্বশেষ দু’টি ডায়েট নিম্ন রক্তচাপের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যায়। এসব খাবারে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং প্রোটিন বেশি মাত্রায় উপস্থিত ছিল। তিনটি ডায়েটই প্রায় ৩ হাজার মিলিগ্রাম সোডিয়াম সরবরাহ করে।
Advertisement
ওজনের কোনো পরিবর্তন না করেই এ দুটি ডায়েট উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে। এ কারণে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন; তাদের জন্য আদর্শ এক ডায়েট হলো ড্যাশ। পাশাপাশি ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এ ডায়েট।
ড্যাশ ডায়েটের খাদ্যতালিকায় যা যা আছে-
>> শাক-সবজি, ফল-মূল এবং শস্যজাতীয় খাবার খাবেন। বিশেষ করে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ এমন খাবার বেশি খেতে হবে।
>> ফ্যাটবিহীন বা স্বল্প ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, হাঁস, মটরশুটি, বাদাম এবং উদ্ভিজ্জ তেল অন্তর্ভুক্ত করুন।
>> স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন- প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটযুক্ত মাংস, পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার এবং নারকেল, পাম কর্নেল এবং খেজুর ইত্যাদি খাবার পরিহার করুন।
>> চিনি ও মিষ্টিযুক্ত পানীয় খাওয়া বাদ দিতে হবে।
>> প্রোটিন বা ফ্যাটজাতীয় খাবারগুলো দৈনিক কার্বোহাইড্রেটের ১০ শতাংশের সঙ্গে অদলবদল করুন।
ড্যাশ ডায়েট চলাকালীন কোনো খাবারের সীমাবদ্ধতা নেই। তবে আপনার ওজনের ওপর নির্ভর করে বা শরীরের চর্বি কতটা তার ওপর নির্ভর করবে আপনি দিনে কত ক্যালোরি পর্যন্ত খাবার খেতে পারবেন।
তবে চিকিৎসকদের মতে, ড্যাশ ডায়েটের ক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন ১২০০, ১৪০০, ১৬০০, ১৮০০, ২০০০, ২৬০০ বা ৩১০০ ক্যালোরি বেছে নিতে পারেন।
ড্যাশ ডায়েটে থাকাকালীন ওজন কমানোর টিপস-
>> প্রতিদিন আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে।
>> মদ্যপান বন্ধ করতে হবে।
>> একটি খাবারের থালায় সব শাক-সবজি ও ফল-মূল নিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
>> পুষ্টিকর এবং ফাইবারজাতীয় খাবার খান। আপেল বা নাশপাতি এগুলো খোসাসহ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
>> টাটকা ফলের রস বা জুস খেতে পারেন, তবে তাতে চিনি মেশানো যাবে না।
সূত্র: মায়োক্লিনিক
জেএমএস/এসইউ/জিকেএস