স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। অধিকাংশ মানুষই বলছেন দলটি নিষিদ্ধ করতে আর দেরি করা উচিত নয়। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে জামায়াতকে মানবতাবিরোধী অপরাধী সংগঠন বলার পর এই দাবি আরো জোরালো হয়েছে। এখন দলটি নিষিদ্ধ করার আইনি প্রক্রিয়া শুরুর পথ সুগম হয়েছে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবিও ওঠেছে। আইনগতভাবে জামায়াত নিষিদ্ধের পাশাপাশি সরকার আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। যেহেতু দলটি দেশের জন্মই চায়নি, যেহেতু দলটি দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে, মানবতাবিরোধী সব অপরাধ করেছে এবং যেহেতু দলটি স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৪৪ বছর ধরে তাদের কৃত অপরাধের জন্য ভুল স্বীকার করেনি, যেহেতু তারা এখনো মনে করে ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধই হয়নি, তাই ওই সংগঠনের প্রত্যেক সদস্যের রাজনীতি করার অধিকার আজীবনের জন্য কেড়ে নেওয়া; তাদের কোনো দলে না-নেওয়া; ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে না-দেওয়া; নামে বেনামে তাদের কোনো সংগঠন করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ অত্যন্ত জরুরি।তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের জিম্মায় নিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জামায়াতের মালিকানায় থাকা ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, কেয়ারি ফুড, ইসলামী ব্যাংক চক্ষু হাসপাতাল, সান সিটি, দৈনিক সংগ্রাম, শতাব্দী প্রেস, আধুনিক প্রকাশনী প্রেস,দারুল ইসলাম ট্রাস্ট, সোনার বাংলা পত্রিকা, রাবেতা ইসলাম, দারুল ইসলাম ট্রাস্ট, ফুলকুড়ি,ফালাহ্ আম ট্রাস্টসহ যে ১০৯ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে;এর সবগুলো বাজেয়াপ্ত করতে হবে। উল্লেখিত দাবি বা প্রস্তাব এরইমধ্যে আলোচনায় এসেছে, এগুলো নতুন কিছু নয়। আমি যে বিষয়গুলো এর সাথে যোগ করতে চাই: যেহেতু তারা এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নেয়নি, তাই এদেশে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদা দেয়া হোক। যারা এদেশটিকে স্বাধীন করেছে, যারা যুদ্ধ করেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটিকে এগিয়ে নিতে চাইছে তাদের মর্যাদা আর স্বাধীনতা বিরোধীদের মর্যাদা এই দেশে সমান হতে পারে না।শুধু জামায়াত নির্মূলই নয়, তাদের আদর্শের কবর রচনাও করতে হবে। তাদের মতাদর্শ কোনোভাবেই প্রচার করা যাবে না। জামায়াত, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোতে যারা আছে তাদের ভোটাধিকারও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত রাখতে হবে। তারা কখনোই সরকারি বা রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হতে পারবে না। মৌলিক অধিকারের কথা এখানে ভাবা যাবে না। কারণ, মানবতাবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধীদের মৌলিক অধিকার থাকতে পারে না। যেসব মানুষ যুদ্ধে বাবা মা আত্মীয় স্বজন হারিয়েছে, যেসব বুদ্ধিজীবীদের জামায়াত হত্যা করেছে, তাদের সন্তানেরা আর ওই রাজাকার আল বদরদের সন্তানদের সমমর্যাদায় বেড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় অযাচারই হচ্ছে। রাজাকার আল বদরদের সন্তানেরা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতো তাহলে না হয় কথা ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাদের পিতারা যে অপকর্ম করেছে তারাও সেই পথে হাঁটছে। বিষধর সাপের বাচ্চারা আবার সুযোগ পেলে যে ছোবল দিবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলছি, একদেশে একজন শহীদের সন্তানের সঙ্গে একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তানের সমঅধিকার থাকতে পারে না। যেসব যুক্তিতে এখনও রাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের কোটা সুবিধা দেয়, ওইসব যুক্তিতেই মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকারীদের, স্বাধীনতাবিরোধীদের কিছু সুবিধা কেটে নেয়াই হবে সাম্য। এ কারণেই যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তই নয়, তারা এদেশে ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাইলে সাধারণের চেয়ে অধিকহারে কর দেয়া উচিত। স্বাধীনতাবিরোধীদের ওপর ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট ট্যাক্সের হার বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী করতেই পারেন। প্রশ্ন ওঠতে পারে কারা স্বাধীনতাবিরোধী। জবাব সহজ-৭১ এ যারা রাজাকার আল বদর ছিলেন, জামায়াত, মুসলিমলীগসহ যে পাঁচটি সংগঠনকে তখনই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেইসব সংগঠনের তখনকার সব নেতাকর্মী থেকে শুরু করে এখনও যারা ওইসব সংগঠন করেন তারা সবাই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের তালিকাভুক্ত হবেন। এরকম পবিত্র একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই উত্তম সময়। এইচআর/এমএস
Advertisement