ধর্ম

বান্দার যে ৪ কাজ আল্লাহ পছন্দ করেন না

ইসলাম সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা। কুরআন জীবন চলার বিধান। ইসলামে বিশ্বাসী প্রত্যেক মুমিনের জন্য কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাই আল্লাহর নির্দেশ। ঈমানের সাক্ষ্য দেয়ার পরও আল্লাহর অনেক বান্দা এমন কিছু কাজ করেন, যা মহান আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। আল্লাহর অপছন্দনীয় সেই কাজগুলো কী?

Advertisement

ইমাম আবু লাইছ সমরকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এমন চারটি কাজের কথা তুলে ধরেছেন; যে কাজগুলো সত্যিই একজন ঈমানদারের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত। যার প্রতিটির ব্যাপারে কুরআনুল কারিমের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাম্বিহুল গাফেলিন গ্রন্থে উল্লেখ করা আল্লাহর চারটি অপছন্দনীয় কাজ হলো-

১. নামাজে অবহেলা করা

নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ না পড়ে অযথা দেরি করা কিংবা অলসতা করে বসে থাকা। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে নামাজে অবহেলা করা লোকদের ব্যাপারে দুর্ভোগ রয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

Advertisement

‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বেখবর।’ (সুরা মাউন : আয়াত ৪-৫)

২. কুরআন তেলাওয়াতে সময় কথা বলা

যখন কোথাও কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, সেখানে প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা বলা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। কুরআন তেলাওয়াত না শুনে অযথা কথাবার্তা রহমত থেকে বঞ্চিত হয় মুমিন। কুরআনুলকারিমের নির্দেশনা হলো- যখন তোমরা কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পাও তখন চুপ করে মনোযোগ সহকারে তেলাওয়াত শোন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আর যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং (অযথা কথাবার্তা না বলে) নিশ্চুপ থাক; যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২০৪)

Advertisement

৩. রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা

ইসলামের নির্দেশনা হলো- রোজার সময় ভোর রাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। এ সময় স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ও ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। রোজার সময় দিনের বেলা এবং ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্মপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর (ভোর রাত থেকে) রাত (সন্ধ্যা) পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

৪. কবরস্থানে বসে হাসাহাসি করা

কবরস্থান কিংবা মৃতব্যক্তির স্মরণ মানুষকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর কবরস্থানে বসে হাসাহাসি মৃত্যু সম্পর্কে বেখেয়ালের নামান্তর। তাই কবরস্থানে পরকালের কথা স্মরণ করে হাসাহাসি পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। কবরস্থানে বসে হাসাহাসি করা মহান আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ। এমনিতেই কম হাসার এবং বেশি হাসার দিকনির্দেশণা এসেছে কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘অতএব তারা সামান্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদলাতে অনেক বেশী কাঁদবে।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৮২)

মুমিন মুসলমানের  উচিত, মহান আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজগুলো থেকে বিরত থাকা। নামাজে অবহেলা না করে ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করা। কুরআন তেলাওয়াত শুনলে মনযোগ দিয়ে শোনা। রোজা অবস্থায় এবং ইতেকাফকালীন সময়ে স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি কবরস্থানে বসে হাসাহাসি থেকে বিরত থাকা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর অপছন্দনীয় ও নিষিদ্ধ কাজ ৪টি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ স্মরণে কুরআনের বিধিবিধানগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস