চিলাহাটি ইউনিয়নের তিনপুল গ্রামের গৃহবধূ মায়া রাণী। জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশি। বিয়ে হয়েছিল দেবীগঞ্জের বিলুপ্ত দহলা খাগবাড়ি ছিটমহলে। দুই দিন আগে প্রথমবারের মতো ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন তিনি। শারীরিক দুর্বলতা এখনো কাটেনি তার। অসুস্থ অবস্থায় বাধ্য হয়ে স্বামীর হাত ধরে স্থায়ীভাবে ভারত যেতে হলো মায়া রানীকে। এভাবে মায়া রাণীর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি বাংলাদেশি নাগরিক তার বাবা-মাসহ পরিবারের স্বজনরা।মায়া রাণীর মতো নতুন ভারতীয় এসব নাগরিকদের বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাদের স্বজন ও প্রতিবেশিরা। সোমবার সরেজমিনে দেবীগঞ্জ উপজেলার ডিগ্রি কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা এসব হৃদয় বিদারক দৃশ্য।এ সময় মায়া রাণী জাগো নিউজকে জানান, নবজাতককে নিয়ে স্থায়ীভাবে ভিন দেশে চলে যেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বাবা-মাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট লাগছে।মায়া রাণীর বাবা মদন রায় জানান, ছিটমহলে বিয়ে দিয়ে আজ মেয়েকে হারালাম। নাতনীকেও মনভরে দেখা হলো না। জানি না আর কবে মেয়ের দেখা পাবো। এতোটুকু শিশু নিয়ে তারা কিভাবে কি করবে, এটা ভাবতেই বুক ফেটে যায়।জানা যায়, তৃতীয় দফায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিলুপ্ত দহলা খাগবাড়ি ছিটমহলের ৩০ পরিবারের আরো ১৫২ বাসিন্দা স্থায়ীভাবে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। তালিকা অনুযায়ী এ যাত্রায় ১৫০ বাসিন্দা ভারত যাওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্য সোমবার দিনভর প্রয়োজনীয় মালামালসহ দেবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে জড়ো হন তারা। সেখানে রাত্রিযাপন শেষে সোমবার সকালে তারা ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম আযম তাদের বিদায় জানান। এ সময় দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ছাড়ার শেষ মুহূর্তে ভারতগামীদের স্বজন ও প্রতিবেশিদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়।জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চূড়ান্ত তালিকার পর ভারতগামীদের মধ্যে দুইজনের দুইটি নবজাতকের জন্ম হয়েছে। এ জন্য ১৫০ জনের স্থলে ১৫২ জন ভারত যাচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ তাদের নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগবুড়ি ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া-হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করার কথা রয়েছে। এ জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চারটি মিনিবাস এবং মালামাল পরিবহনের জন্য আটটি ট্রাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আগে দুই দফায় জেলার তিন উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহলের ৪৩ পরিবারের ২০২ জন বাসিন্দা স্থায়ীভাবে ভারতে যান। আগামী ২২ নভেম্বর বাকি ১৩৫ জন একই সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করবেন।অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম আযম জাগো নিউজকে জানান, সীমান্তে ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষে তারা ভারতে প্রবেশ করবেন। ভারতের কোচবিহার জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আইশা রানী তাদের স্বাগত জানাবেন।সফিকুল আলম/এআরএ/পিআর
Advertisement