দেশজুড়ে

ছোট্ট সাবাকে আগুন থেকে বাঁচাতে বুকে আগলে রেখেছিলেন মা

রাজশাহীর কাটাখালীতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের ১৭ জন মারা গেছেন। এতে এক পরিবারের পাঁচজন মারা যান। ওই পরিবারের দুই বছরের শিশু সাবা। তাকে আগুন থেকে বাঁচাতে বুকে আগলে রেখেছিলেন মা শামসুন নাহার। কিন্তু দুজনই আগুনে দগ্ধ হয়েছে মারা গেছেন।

Advertisement

আগুনের লেলিহান শিখায় বিকৃত হয়ে যায় সবার শরীর। কিন্তু মা ও শিশুর শরীর পরম মমতায় একে অপরের সঙ্গে মিশেছিল। অন্য কাউকে চিনতে না পারলেও শিশু সাবাকে বুকে আঁকড়ে রাখার কারণেই স্বজনরা শামসুন নাহারকে শনাক্ত করেন।

নিহত শামসুন নাহারের বাবা আব্দুল করিম সরকার বলেন, ‘আমার জামাতা সালাউদ্দীন, দুই কন্যা শামসুন নাহার ও কামরুন নাহার, নাতি সাজিদ ও সাবা দুর্ঘটনার পর আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তাদের কাউকেই চেনা যায়নি। শুধু নাতি সাবা ছিল শামসুন নাহারের বুকে জড়ানো। মৃত্যুও তাদের আলাদা করতে পারেনি। এ থেকেই আমরা শামসুন নাহারের মরদেহ চিহ্নিত করেছি।’

এদিকে শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রাজশাহীর কাটাখালীতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের ১৮ জনের মধ্যে বেঁচে যান শুধু পাভেল (১৯) নামের এক যুবক। দুর্ঘটনায় তার বাবা মোখলেছার রহমান ও মা পারভীন মারা গেছেন। পাভেল মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে অচেতন অবস্থায় সড়কে পড়েছিল। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Advertisement

পরে তার স্বজনরা এলে জানা যায়, তিনি নিহত মোখলেছার ও পারভীনের ছেলে পাভেল। রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র পাভেল। তার এক বোন বাড়িতে দাদির কাছে ছিল। সে না আসায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে।

পাভেলের নিকট আত্মীয় পীরগঞ্জের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘পাভেলের বাবা আমার ভাগ্নে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এসে জানতে পারি শুধুমাত্র পাভেল বেঁচে আছে। তবে সে কী অবস্থায় আছে তা জানতে পারিনি। আইসিইউতে আমাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি।’

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, পাভেল এখন অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত। তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। রিপোর্ট ভালো এসেছে।

আইসিইউতে কর্মরত নার্স তাওলিনা হেমব্রত জানান, পাভেলকে এখনো অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

Advertisement

এদিকে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা ও কয়েকজনকে জখমের অভিযোগে হানিফ পরিবহনের চালক আব্দুর রহিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রহিম পুঠিয়া উপজেলার পীরগাছা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। কাটাখালী থানা পুলিশ বাদী হয়ে রহিমের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেন।

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা তদন্তে জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির প্রধান আবু আসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। এজন্য গাড়ি দুটির ইঞ্জিনের অবস্থা, চালকের সে সময়ের অবস্থা জানতে দু-তিন দিন সময় লাগবে। তার আগে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।’

এসজে/এমএস