দেশের উন্নয়নের পথযাত্রা থামিয়ে দিতে বিএনপি মৌলবাদীদের রাস্তায় নামিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
Advertisement
তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক উগ্র মৌলবাদীকে রাস্তায় নামিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথযাত্রা থামিয়ে দেয়া যাবে না। আপনার ভুল পথে রাজনীতি করছেন। ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন। জনগণ রক্ত দিয়ে এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়েছে। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সুযোগ নেই।
শনিবার দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ কর্মসূচি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আসবেন, সেটাইতো স্বাভাবিক। এটাই তার সহনশীলতা, প্রতিবেশীর প্রতি তার দায়িত্ববোধ। বাংলাদেশ ও দেশের জনগণকে সম্মানিত করার জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তার প্রশংসা না করে, তিনি তার সমালোচনা করলেন। তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গ মৌলবাদী চক্রকে মাঠে নামালেন।
Advertisement
দেশে অঘোষিত কারফিউ চলছে— বিএনপি মহাসচিবের এ মন্তব্যের জবাবে খালিদ মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমান দেশকে অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমৃত্যু সান্ধ্য আইন দিয়ে দেশ শাসন করেছিলেন তিনি। সেই কথা মির্জা ফখরুলরা বলেন না। অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলাদেশকে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গর্ব ও মর্যাদার জায়গায় নিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে ভালো শাসক আর নেই মন্তব্য করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছেন। এর উপর দাঁড়িয়ে আমরা এগিয়ে চলছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র কীভাবে চলবে সেজন্য ১৯৭৪ সালে মেরিটাইম অ্যাক্ট করেছেন। এর ৮ বছর পর জাতিসংঘ এরকম আইন করেছে। তাবত দুনিয়া যা করেনি বঙ্গবন্ধু তা করেছেন। সীমান্ত চুক্তি ও গঙ্গা চুক্তি বঙ্গবন্ধু করে গেছেন। সেই চুক্তি এখনো প্রবাহমান।
জিয়া-এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের দেশপ্রেম ছিল না মন্তব্য করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংকের বিরোধিতার মুখে কৃষিতে ভর্তুকি দিয়েছেন। তিনি বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মাসেতু করেছিলেন। কেউ এ সাহস দেখাতে পারেনি। কারণ তাদের মাঝে দেশপ্রেমের ঘাটতি ছিল। তারা দেশের মানুষের মঙ্গল চাননি। তারা এ বাংলাদেশকে ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক তা চায় না। তারা পোড়া মাটির দেশ তৈরি করতে চেয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-জলোচ্ছ্বাসের দেশ। মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হয়ে যাবে। এক সময় গিয়ে বাংলাদেশ ভিখারীর দেশ হয়ে যাবে, এটাই তারা চেয়েছিল। আমরা দেখতে পাই, বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দরকার নেই। বিদেশি সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। খালেদা জিয়া ভারত সফর করে এসে বললেন, গঙ্গা চুক্তির কথা বলতে আমিতো ভুলে গেছি। দেশপ্রেম না থাকলে এভাবেই ভুলে যায়। কারণ তারা এই বাংলাদেশকে ব্যার্থ রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল।
Advertisement
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানরা সশরীরে এসে বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছে।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির জন্য সারা পৃথিবীর সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানরা আমাদেরকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। আঞ্চলিক রাষ্ট্রের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা নিজে সশরীরে এসে বাংলাদেশকে সন্মানিত করেছে। এই অগ্রযাত্রার উদযাপনে অংশগ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সেই জায়গায় অবস্থান করেছে বলেই আমাদের এই অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছন্দা পালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বোচাগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. জাফরুল্লাহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফছার আলী, সেতাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুস সবুর প্রমুখ।
পরে বিকেলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন প্রতিমন্ত্রী। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, মনোরঞ্জনশীল গোপাল এমপি, জাকিয়া তাবাসসুম জুই এমপি, সাবেক এমপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ।
এসইউজে/এমএসএইচ/এমকেএইচ