স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অবস্থানের সময় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা করলে কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
Advertisement
শনিবার (২৭ মার্চ) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উপলক্ষে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এমন একটি চমৎকার সময়েও দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর জন্য পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের কেউ কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে এ বাংলাদেশ রাম-রহিমের বাংলাদেশ, এ বাংলাদেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের বাংলাদেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বাংলাদেশে ধর্মের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাদের একটি পরিচয় আছে। সে পরিচয়, আমরা বাঙালি, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এ বাংলাদেশে নতুন করে যদি কেউ ধর্মীয় উসকানি সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। কোনোভাবেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেয়া হবে না।’
Advertisement
প্রয়োজনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের কঠোর বিচারের মুখোমুখি করা হবে উল্লেখ করে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম অপর ধর্মে আঘাত করায় বিশ্বাস করে না, অপর ধর্মাবলম্বীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করায় বিশ্বাস করে না। এই শান্তির ধর্ম ইসলামের নাম ব্যবহার করে যারা ’৭১ সালে লুণ্ঠন করেছে, ধর্ষণ করেছে, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেছে তাদের চেহারা আমরা চিনি। তাদের প্রেতাত্মারা আবার মাথাচাড়া দেয়ে উঠার চেষ্টা করছে। যুদ্ধাপরাধী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিচার শেখ হাসিনা করেছেন। শান্তির বাংলাদেশকে কোনোভাবে ধ্বংস করতে দেয়া হবে না।’
স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল ০.৫৮ বিলিয়ন ডলার যা আজ ৩৪৮ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ছিল ১২৯ ডলার যা বর্তমানে ২০৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ছিল ৮৮ শতাংশ যা আজ ২০ শতাংশে নেমেছে। গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর যা এখন ৭২.৬ বছর, শিক্ষার হার ছিল ২০.৯ শতাংশ যা আজ ৭২.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল মাত্র ৪০০ মেগাওয়াট, আজ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ১৯৭২ সালে আমাদের বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার, এখন ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাংলাদেশ প্রণয়ন করেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ৫০১ কোটি টাকা, যা এখন ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।’
বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে উল্লেখ করি তিনি বলেন, ‘মৎস্য ও গবাদিপশু উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এ উন্নত-সমৃদ্ধ অবস্থার কারণেই উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘ চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার গৌরবময় স্থানে পৌঁছেছে। আমরা সকলে এ গৌরবের অংশীদার। আমরা ২০৪১ সালের পূর্বেই সমৃদ্ধ-উন্নত বাংলাদেশে পৌঁছে যাব। যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। যে স্বপ্ন দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছিলেন। এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পরিকল্পনা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃপ্ত প্রত্যয়, বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা, সততা এবং পরিশ্রমের কারণে।’
শ ম রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেছেন, যেভাবে বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা বিশ্বের বিস্ময়। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এসময় বাংলাদেশে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ অনেকেই বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। সারাবিশ্ব বলছে ঈর্ষা করার মতো উন্নয়ন বাংলাদেশ করতে পারছে।’
Advertisement
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান রনি দত্ত, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বশির গাজী, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ফিরোজ কিবরিয়া, নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবির মোহাম্মদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী সাখাওয়াত, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন।
আইএইচআর/জেডএইচ/জিকেএস