রাজনীতি

‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’র সমাবেশ থেকে পুলিশ হেফাজতে ১০-১২ জন

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমন ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শুক্রবার (২৬ মার্চ) দেশে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ। ওই সমাবেশ শেষে পুলিশ ১০-১২ জনকে আটক করে বলে দাবি করেছে কর্মসূচির আয়োজকরা। তবে পুলিশ বলছে, দু-তিনজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

Advertisement

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এ সমাবেশ শুরু হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীরা।

এ সমাবেশে নেতাকর্মীদের নিয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হাজির হন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ৪ মিনিটের বক্তব্য দেন নুর। নুরের বক্তব্যের সময়ই সমাবেশ ঘিরে ফেলে পুলিশ। বক্তব্য শেষে নুর ও তার নেতাকর্মীরা দক্ষিণ দিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে শুরু করলে তাদের আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। তখন তারা সমাবেশে ফিরে যান। এরপর নুর ও তার নেতাকর্মীরা জোনায়েদ সাকি ও ডা. জাফরুল্লাহর পাশে অবস্থান নেন।

সমাবেশের মাইক নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি পুলিশকে বারবার আটক না করার অনুরোধ জানান। এ সময় জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমি আপনাদের (উপস্থিত পুলিশ) অনুরোধ করছি, এই সমাবেশ থেকে কাউকে গ্রেফতার করবেন না। প্লিজ। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছি, আমরা আর কিচ্ছু করবো না।’

Advertisement

সাকি কথা বলা শেষ করলে একজন স্লোগান দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ভিপি নুর মাইক নিয়ে সবাইকে শান্ত হতে বলেন।

এ সময় নুর বলেন, ‘আপনারা এখানে কোনো প্রকার উসকানি বা বিক্ষোভ করবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে এই প্রতিবাদ সম্পন্ন করতে দেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ করা উচিত হবে না। সুতরাং কোনো ধরনের উশৃঙ্খল বক্তব্য বা উত্তেজনা ছড়াবেন না। পুলিশের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই।’

তখন সেখানে এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘পুলিশ নিয়ে এখানে কোনো কথা হবে না। পুলিশ নিয়ে কথা বললে শুয়ায় (শুইয়ে) ফেলবো।’

এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। তবে পুলিশ সমাবেশ ঘিরে রাখে। দুপুর ১টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়। সমাবেশে সর্বশেষ বক্তব্য রাখেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনিও সমাবেশ থেকে কাউকে আটক না করার আহ্বান জানান।

Advertisement

সমাবেশ শেষে ডা. জাফরুল্লাহসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নুর ও তার নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের ভেতরের দিকে রওনা দেন। তখন প্রেস ক্লাবের গেট খুলতে বাধা দেয় পুলিশ। ফলে কেউ প্রেস ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিল না। সেখান থেকে প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যে ১০-১২ জনকে পুলিশ আটক করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এরপর ডিএমপির রমনার উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর বলেন, ‘আমরা তাদের গ্রেফতার করিনি। তাদের পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, সেই মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাদের ধরা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর তারা যদি আসামি না হয়, সাধারণ মানুষ হয় আমরা ছেড়ে দেব। দু-তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হচ্ছে। সেখানে বিদেশি মেহমান আছেন। রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ করা হয়েছে, অস্থিতিশীল বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, এমন কোনো কার্যক্রম যেন তারা না নেন। আমরা মূলত তাদের সেটাই বলেছি যে, আজকের দিনে কেউ যেন কোনোরকম উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বা নাশকতামূলক কার্যক্রম না করেন। তাদের বলা হয়েছে যে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করবেন। শেষ করে চলে যাবেন। যেহেতু আজ তারা এসেছে, আপনারা দেখেছেন যে, আমরা অত্যন্ত ধৈর্য ধরে তাদের প্রোগ্রাম শেষ করতে দিয়েছি। প্রোগ্রাম শেষ করে তারা চলে গেছেন।’

 

পিডি/ইএ/এইচএ/এএসএম