স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দেশ এখন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির পথে। উন্নয়নের তাক লাগানো সব চমকে বাংলাদেশ এখন গোটা বিশ্বের কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত। শিল্প-বাণিজ্যসহ সব খাতের ক্রমবর্ধমান বিকাশে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে দেশের অর্থনীতি। দেশ যত উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে ততটাই শিল্প-বাণিজ্যের অবদান বাড়ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এই খাতের বিকাশ ঘটেছে বহুগুণ।
Advertisement
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি রফতানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। এছাড়া চামড়াজাত পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের ৪৫টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার আওতায় খাতভিত্তিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
বাণিজ্যখাতের অগ্রগতিমুক্ত বাজার অর্থনীতির ক্রমবিকাশে বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও বহুমুখী করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আমদানি-রফতানিকে।
বাংলাদেশের প্রধান রফতানিখাত তৈরি পোশাক। দেশের রফতানির প্রায় ৮১ ভাগ আসে এ খাত থেকে। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের জন্য এ শিল্পখাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর রফতানি বাণিজ্য হবে আরও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। সেই সঙ্গে বিপুল সম্ভাবনা ও সুযোগও এসেছে দেশের জন্য। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আস্থা পাচ্ছেন বিনিয়োগ করতে।
Advertisement
করোনার প্রকোপ শুরুর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে তৈরি পোশাক রফতানি করে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনার প্রকোপের কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা কিছুটা কঠিন। তবে করোনা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পোশাকখাত। বিশেষ উদ্যোগে এখন তৈরি পোশাক কারখানায় নিরাপদ ও কর্মীবান্ধব পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছেন। দেশে বর্তমানে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ গড়ে উঠছে। এক সময় তৈরি পোশাকখাতে ব্যবহৃত কার্টন থেকে শুরু করে সব সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এখন দেশের চাহিদা পূরণ করে এসব সামগ্রী বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। বর্তমানে এ খাতে ৪.১ মিলিয়ন শ্রমিক কাজ করছেন, এর অধিকাংশই নারী। দেশের জনশক্তির প্রায় অর্ধেক নারী; এ বিপুল সংখ্যক নারী জনশক্তিকে উৎপাদনশীল খাতে অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছে তৈরি পোশাকখাত।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক আমদানি বাণিজ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যশস্য, কৃষি উপাদান, শিল্পের মেশিনারিজ, কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ, জ্বালালি এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদার একটি বৃহৎ অংশ বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমেই মেটানো হয়ে থাকে। জাতীয় বাজেটের অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে আমদানি উদ্ভূত কর ও শল্ক দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের প্রধান আয়ের উৎস। স্বাধীনতার পরবর্তী বছরগুলোতে বার্ষিক আমদানির মধ্যে ভোগ্যপণ্য এবং তৈরি দ্রব্যাদির প্রাধান্য ছিল। সাম্প্রতিককালে এই প্রাধান্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে এবং তুলনামূলকভাবে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ আমদানির হার ও পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে রফতানিমুখী শিল্প এবং আমদানি প্রতিকল্প শিল্পের ওপর অগ্রাধিকারের ফলে আমদানির হার ও পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, বিভিন্ন কৃষি পণ্য, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, প্লাস্টিক পণ্য, মেডিকেল পণ্যের মতো খাতগুলোর রফতানি বৃদ্ধি করতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করছে সরকার। এ খাতগুলোর রফতানি সক্ষমতাবৃদ্ধি, মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের বিষয়ে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে ব্যাপক কার্যক্রম নেয়ার ফলে রফতানি বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে। সঙ্গত কারণে রফতানি বাণিজ্যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হচ্ছে। রফতানি ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদানের জন্য ২ শতাংশ থেকে শুরু করে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক বাণিজ্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি পণ্য উৎপাদনকারী ও ক্রেতাদের বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের একটি কমন প্লাটফর্মে নিয়মিত ও সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পূর্বাচল উপ-শহরে চীন সরকারের সহায়তায় ২০ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে স্থায়ী মেলা কেন্দ্র ‘বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’। গত ৭ ফেব্রুয়ারি পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার জন্য নির্মিত এই এক্সিবিশন সেন্টার সরকারের কাছে হস্তান্তর করে চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনা অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ২৩১ কোটি টাকা এবং ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে।
Advertisement
বস্ত্রখাতকে উৎসাহিত করতে সরকার বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধায় বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা, ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলার সুবিধা, হ্রাসকৃত শুল্কে মেশিনারিজ আমদানি, তৈরি পোশাকখাতে কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন নিশ্চিত করতে সরকার বিনা শুল্কে ফায়ার ডোর ও এ সংশ্লিষ্ট ইক্যুইপমেন্ট আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। রফতানিমুখী দেশীয় বস্ত্রখাতে শুল্কবন্ড ও ডিউটি ড্র ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ হারে প্রদান করা হচ্ছে। বস্ত্রখাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে প্রদত্ত নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ দেয়া হচ্ছে। ইউরোপ অঞ্চলে রফতানির জন্য প্রচলিত ৪ শতাংশের বেশি আরও ২ শতাংশ বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। রফতানিমুখী শিল্পের অনুকূলে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে অতি অল্প সুদে কাঁচামাল কেনার জন্য ঋণ প্রদানের সুযোগ রয়েছে, বর্তমানে এ ফান্ডে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রয়েছে।
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিতে ১২ শতাংশ এবং গ্রিন ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ করপোরেট কর হার বহাল রয়েছে। পণ্য বহুমুখী করণের লক্ষ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফুটওয়্যার (লেদার-নন লেদার), লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্লাস্টিক খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ১ হাজার ১২ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ‘এক্সপোর্ট কমপেটিটিভনেস ফর জবস’ শীর্ষক ছয় বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো- নির্ধারিত খাতের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, রফতানি বাজারে প্রবেশের জন্য বিদ্যমান শর্তাবলী প্রতিপালন এবং বাজার সংযোগ বৃদ্ধি করা।
বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানি আইনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংশোধন করেছে। এর ফলে ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশ আট ধাপ এগিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের ৪৫টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং এমওইউ স্বাক্ষর করা হয়েছে। যার আওতায় খাতভিত্তিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। বহুমাত্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সুবিধা যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বাণিজ্য সহজীকরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল কাজ করে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দক্ষ করে গড়ে তুললে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ফরেন ট্রেড ইন্সটিটিউট।
এলডিসি সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নত দেশে প্রায় শতভাগ শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চিলি ও থাইল্যান্ড থেকেও উল্লেখযোগ্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রফতানি ও সেবা খাতে ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি সম্ভব হয়েছে। অতিসম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণার চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে; তা কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ আর এলডিসিভুক্ত দেশের বাণিজ্য সুবিধা পাবে না। উল্লিখিত সময়ের পর বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নত দেশ থেকে জিএসপি প্লাস নামে বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর করেছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ বা এফটিএ স্বাক্ষর করে বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণ করার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ। অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা চলছে।
শিল্পখাতে অগ্রগতি২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে শিল্পখাতের অবদান ৩৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছর ছিল ৩৫ শতাংশ। জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ প্রণয়নের ফলে দেশে জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের নতুন ধারা সূচনা হয়েছে। এসএমই খাতের উন্নয়ন, গুণগত মান অবকাঠামো সৃষ্টি, মেধা সম্পদের সুরক্ষা, শিল্প উদ্ভাবন, অ্যাক্রেডিটেশনসহ শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুঘটকগুলোর অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেখা যায়- বৃহৎ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এই তিন ধরনের শিল্পেরই আগের বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ভালো। সেখানে রফতানিমুখী খাত ও অভ্যন্তরীণ শিল্পখাত দুটোই এগিয়েছে। সরকারের চলতি মেয়াদে জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান ৪০ শতাংশ এবং এ খাতে শ্রমশক্তি ২৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে আমদানি পণ্যের নির্ভরশীলতা হ্রাস ও রফতানি বাড়াতে গুরুত্ব দেয়া হবে। নারীদের শিল্পায়নের মূল ধারায় নিয়ে আসা, পুঁজিঘন শিল্প স্থাপনের পরিবর্তে শ্রমঘন শিল্প স্থাপন, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের সম্প্রসারণ, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বেসরকারিখাতের বিকাশে নীতি সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বার্ষিক ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শাহজালাল ফার্টিলাইজার স্থাপনা করা হয়েছে। যার ফলে কৃষকদের কাছে স্বল্প মূল্যে ও দ্রুততম সময়ে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে এখন আর কোনো সারের সংকট নেই, কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। লবণ শিল্পের ফলে লবণ চাষের জমিতে লবণ মৌসুমের পরবর্তীতে ধান ও চিংড়ি চাষ বাড়তি আয় সম্ভব হচ্ছে। লবণ চাষ সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে সুন্দরবনের অবৈধ কাঠ কাটার প্রবণতা কমে এসেছে।
রাজধানীর হাজারীবাগসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ট্যানারি শিল্পগুলোকে একটি পরিবেশবান্ধব স্থানে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও সাভারে ধলেশ্বরী নদীর তীরে ২০০ একর জমিতে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প নগরী স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, পরিবেশ বান্ধবভাবে ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কাজ করছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিসিকের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকে আগ্রহী করে তুলতে গড়ে তোলা হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব অঞ্চলে উদ্যোক্তারা তাদের শিল্প ইউনিট স্থাপন করছেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ইতোমধ্যে ৯৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও জমি অনুমোদন করেছে, যার মধ্যে ৬৯টি সরকারি এবং ২৯টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল। নয়টি অঞ্চল ইতোমধ্যে উৎপাদনে গেছে এবং ২৮টি জোনের উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। ৩৫ শিল্পের নির্মাণ কাজ চলছে; আর ২৬ শিল্প উৎপাদনে গেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ইতোমধ্যে ৩৯ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
সরকার বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। স্থানীয় এবং বিদেশি উভয় ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে একই সুবিধা ভোগ করবেন। এদিকে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বেজা এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ২৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে। প্রস্তাবিত এ বিনিয়োগ দেশে ১০ লাখেও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে সরকারি এবং ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেসরকারি খাতের জন্য।
এ প্রসঙ্গে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে আমাদের দেশ এগিয়ে চলছে। কৃষিখাতের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্য খাতও এগিয়ে চলছে। শ্রমিক পাওয়া যায় না বিধায় কৃষিখাত এখন যান্ত্রিকীকরণ করা হয়েছে। এখন ধান লাগানো-ধান কাটা সবকিছু যন্ত্রের মাধ্যমে করা হচ্ছে। কৃষি দিয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে নেয়া যায় না, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য শিল্প খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা কৃষি খাতের পাশাপাশি উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিসিকের মাধ্যমে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের দেশে শেখ হাসিনার ক্ষমতার ধারাবাহিকতার কারণে দেশের শিল্প খাত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, যেটা অবিস্মরণীয়। আমি মনে করি অদূর ভবিষ্যতে এই খাত আরও এগিয়ে যাবে।
আইএইচআর/এমআরআর/এএসএম