দেশজুড়ে

র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন : চার্জশিট দিতেই ১০ বছর পার

র‌্যাবের গুলিতে কলেজছাত্র লিমন হোসেনের পা হারানোর দশ বছর পরও মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ ঘটনায় লিমনের মায়ের দায়ের করা মামলাটি র‌্যাব, পুলিশসহ বিভাগীয় কমিশনার কয়েক দফায় তদন্ত করার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তাধিন রয়েছে।

Advertisement

লিমনের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ র‌্যাবের অভিযানের সময় দুর্ঘটনাক্রমে গুলিবিদ্ধ হন লিমন হোসেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে গুলিবিদ্ধ কিশোর লিমনের পা পরে কেটে ফেলতে হয়। তখন কাউখালীর কাঠালিয়া কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন লিমন। পরবর্তীতে সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয় (গবি) আইন বিভাগে পড়াশোনা করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি এখন প্রতিষ্ঠানটির আইন বিভাগেই শিক্ষকতা করছেন। কিন্তু পঙ্গুত্ব তার পিছু ছাড়েনি! সারাজীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন এই অভিশাপকে।

১০ বছর আগে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সেই ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে তার মা হেনোয়ারা বেগম র‌্যাবের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এত বছর পেরিয়ে গেলে আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। তদন্তেই আটকে আছে সবকিছু। এখনও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলার পর কয়েক দফায় অনেকগুলো তদন্ত কমিটি হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, বিভাগীয় কমিশনারের পর এখন সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে।

Advertisement

মামলার অগ্রগতি নিয়ে হতাশ ভুক্তভোগী লিমন হোসেন বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। দশ বছর শেষ হয়েছে গেছে, এখনো তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট দিতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমত আমরা এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচার পেলাম না। এখন আবার বিচার চাওয়ার জন্য আমাদের বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে আমরা বাড়ি যেতে পারি না।’

লিমন আরও বলেন, ‘আমাদের মনোবল দৃঢ় আছে। বিচার একদিন হবেই। আমরা হাল ছেড়ে দিব না। বিচারের জন্য যতদূর যাওয়া দরকার যাব।’

তদন্তের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মাসখানেক হলো আমি মামলাটি হাতে নিয়েছি। মূলঘটনা বের করার চেষ্টা করছি। আসলে এসব বিষয়ে একটু সময় লাগে। কেননা তদন্ত রিপোর্ট সম্পন্ন করে জমা দেওয়ার পর আবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাচাই করেন। এরপর তা প্রকাশিত হয়। তবে আগের চেয়ে কম সময় লাগবে বলে আশা করছি।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘উপর মহল থেকে কোনো চাপ নাই। চাপ থাকলে তো আগে একবার তদন্ত শেষ করে আদালতে যেত না। পেন্ডিং অবস্থায় থাকতো। আদালতের কাছে যেখানে ত্রুটি মনে হয়েছে, তা যাচাইয়ের জন্য আবারো দিয়েছে।’

মো. আতিকুর রহমান/আরএইচ/এএসএম