ইমন ইসলাম
Advertisement
ক্যাসিয়া রেনিজেরার (জাপানের জাতীয় ফুল) সৌন্দর্যে নতুন রূপে সেজেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিবছরের মতো এবারও মন মাতানো মনোমুগ্ধকর থোকা থোকা ক্যাসিয়া ফুলে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি পেয়েছে নতুন রূপ নতুন প্রাণ। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এবং মার্চ-এপ্রিল মাসে ক্যাসিয়া গাছে ফুল ফোটে। বৈচিত্র্যময় এ ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুল গাছ। পাতাশূন্য গাছে বিভিন্ন রঙের ফুল যেন মন কাড়ে পর্যটকদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ হলো ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এ ফুল গাছগুলোর অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, পুরাতন কলা ভবনের ভেতরে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে, জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থিত গাছগুলোয় ক্যাসিয়া ফুল ফুটেছে।
ক্যাসিয়া রেনিজেরা একটি বিদেশি ফুল। এর আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানে। দেশটির জাতীয় ফুল। আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ফুল গাছ ছিল না। জানা যায়, ২০০০ সালের কোনো একসময় ড. এ আর খান সর্বপ্রথম ক্যাসিয়া রেনিজেরার বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে রোপণ করেন। ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুল ও বীজ অনেকটা সিম আকৃতির লম্বা দণ্ডের ফল। ফুলের ভেতর গোলাকৃতির বীজ। আতা ও ডালিম গাছের সাথে অনেকটা তুলনীয়।
Advertisement
ক্যাসিয়া রেনিজেরার বৈজ্ঞানিক নাম হলো বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া। ক্যাসিয়া গাছের উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার হয়ে থাকে। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই ফুল ধরতে শুরু করে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া প্রায় প্রতিটি সময়েই ক্যাসিয়া গাছ থাকে পাতাশূন্য। করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ। শিক্ষার্থীশূন্য ফাঁকা ক্যাম্পাসে প্রকৃতি পেয়েছে তার আপন রূপ। ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুলগুলো। ক্যাসিয়া ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ক্যাম্পাসের আশেপাশের প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সঙ্গীতা কর্মকার তিথি এ ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পেজে দেখে এক বান্ধবীর মাধ্যমে জানতে পারি ফুলটির নাম। অনেক মায়া আর সৌন্দর্য আছে ফুলটির মাঝে। ভেবেছিলাম গাছ যখন আছে; তখন ক্যাম্পাসে থাকাকালীন একবার না একবার দেখতে পাবো। কিন্তু করোনার সময়ে এ মনোমুগ্ধকর ফুলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়লেও তা দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে না। যা সত্যি মনকে খারাপ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে আশা রাখছি, সামনের বছর হয়তো এ ফুলের দেখা পাবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকৃতির নিসর্গ খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুল অনেক ভূমিকা রাখে। এটা শুধু ফুল-ই নয়, দেখতে অনেকটা শূন্যে ভাসা হিমবাহের মতো। জাপানের দৃষ্টিনন্দিত ও অনন্য এ ফুল দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরাবরই উপভোগ করার মত। প্রতিটি গাছপালা যেন নতুন রূপে সেজেছে। আর এ সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা এনেছে ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই ক্যাম্পাসে অবস্থান করে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন না। আমি ক্যাম্পাসের পাশেই আমবাগানে অবস্থান করায় ক্যাম্পাসে যাতায়াত হয়। বিশেষত ক্যাম্পাসের এ ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুলের সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ।’
Advertisement
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/এএসএম