দেশজুড়ে

গণকবরের জমি লিজ দিল রেল বিভাগ

বগুড়ায় একটি গণকবরের ২০ শতাংশ জমি রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা লিজ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন নানাভাবে শুরু হয়েছে দুই কোটি টাকা মূল্যের এই জায়গাটির দখল প্রক্রিয়া। বাঁশ ও টিনের বেড়া দিয়ে ইতোমধ্যেই শহীদদের কবরস্থানটি ঘিরে ঘর-বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ছোট্ট একটা স্মৃতি ফলকে নারুলী গণকবর ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে বারবার অবহেলিত এই গণ কবরের জায়গা পুনরুদ্ধারে জন্য স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গণকবরের মাঝ বরাবর তৈরি করা হয়েছে ড্রেন। এটি দিয়ে নর্দমার পানি এসে পড়ছে করতোয়া নদীতে। নর্দমার দুষিত পানি গণকবরকে করে তুলেছে অপবিত্র। গণকবরের পূর্ব দিকে এক দোকানসহ বাড়ি নির্মাণ হয়েছে। আর পশ্চিম দিকে কল্পনা নামের এক নারী রেলের কাছে থেকে জমি লিজ নিয়ে বসবাস করছেন সেই জায়গায়। তিনি গণকবরের জায়গায় বেড়া দিয়ে রেখেছেন। দখলকারীদের একজন দৌলত জাগাে নিউজকে জানান, তিনি ৫০ বছর আগে গণকবরের জায়গা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন। অথচ তিনি জানান, তার বয়স ৪৫ বছর। অর্থাৎ স্বাধীনতার এক বছর আগে তার জন্ম হয়েছে। বগুড়ার রেলের স্টেট অফিসার মোকাররম হোসেন জাগো নিউজকে জানান, যারা লিজ নেয়ার কথা বলছেন তাদের লিজ প্রক্রিয়া বগুড়া থেকে হয়নি। যেহেতু সমস্ত ভূমি লালমনিরহাটের ভূমি অফিসের আওতাধীন। তাই বিষয়টি তারা বলতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে লালমনিরহাট রেল বিভাগের ভূমি কর্মকর্তারা কেউই কথা বলতে রাজি হননি।এদিকে গণকবরের জমি এভাবে দখল ও লিজ প্রদানের ঘটনায় বিভিন্ন মহল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম ওমর জাগো নিউজকে জানান, এখানে তার বড় ভাই, মামা ও ফুপাকে হত্যা করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত হয়নি বধ্যভূমির জমি লিজ দেয়া। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার রুহুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, গণকবরের জায়গা যারা লিজ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান অ্যাড. রেজাউল করিম মন্টু জাগো নিউজকে জানান, লিজ বাতিল করে গণকবরের জায়গা পুনরুদ্ধার করা উচিত। রেলওয়ের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা পবিত্র ভূমি লিজ দিয়েছেন।শহীদ পরিবারের সদস্য ফাইদুল আহাদ রুমি জাগো নিউজকে জানান, এখানে আমার ভাই, ফুপাসহ ৩১ জন মানুষের গণকবর রয়েছে। এটি রক্ষার দায়িত্ব ছিল প্রশাসনের। তা না করে উল্টো জায়গাটি লিজ দিয়ে অপবিত্র করা হয়েছে। আমরা এলাকার মানুষ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।উল্লেখ্য, বগুড়ার নারুলীর এই গণকবরটির স্থানে বিভিন্ন জায়গা থেকে মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে হত্যা করা হতো। শেষ পর্যন্ত এলাকার প্রায় ৫০ জন নিরীহ সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে এই গণকবরে মাটিচাপা দেয়া হয়। কারো মতে, শহীদের সংখ্যা ৩১ জন। আবার কারো মতে ৫০ এরও অধিক।লিমন বাসার/এমজেড/পিআর

Advertisement