ধর্ম

হজরত ইবরাহিম (আ.) ও পরবর্তীদের রোজা পালন

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যুগে যুগে নবি রাসুলগণ রোজার বিধান পালন করেছেন। পৃথিবীর প্রথম রোজা পালন করেছেন আদি মানব হজরত আদম আলাইহিস সালাম। এ ছাড়া মুসলিম উম্মাহকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে রোজার বিধানের কথা তুলে ধরেছেন। প্রথম রাসুল হজরত নুহ আলাইহিস সালামও রোজা পালন করেছেন। কেমন ছিল তাঁর রোজা পালন?

Advertisement

যুগে যুগে নবি-পয়গম্বরদের রোজা পালনের কথা সুস্পষ্ট ভাষায় কুরআনে ওঠে এসেছে এভাবে-

‘হে ঈমাদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমারে আগের লোকদের (নবি-রাসুল ও তাদের উম্মত) ওপর। যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

এ আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য ফরজ নয়; বরং আগের অনেক নবি-রাসুল ও তাদের অনুসারীদের জন্যও ফরজ ছিল।

Advertisement

হজরত ইবরাহিম আলাহিস সালাম ও পরবর্তী যুগের বিভিন্ন জাতির রোজা

হজরত নুহ আলাইহিস সালামের পর সর্বাধিক পরিচিত নবি ছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাআলা তাকে খলিল তথা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম কয়টি রোজা পালন করতেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো বণনা না থাকলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তাঁর যুগেও ৩০টি রোজা রাখা আবশ্যক ছিল।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের যুগকে বৈদিক যুগ বলা হতো। সে ধারাবাহিকতায় বেদের অনুসারী ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যেও ব্রত পালন তথা উপবাস প্রথা চালু ছিল। তারা প্রত্যেক হিন্দি মাসের ১১ তারিখে ব্রাহ্মণদের ওপর একাদশী’র উপবাস করতো।

- পরবর্তী যুগে মূর্তি পূজারী ব্রাহ্মণরাও ব্রত বা উপবাস করতেন। তারা কার্তিক মাসের প্রত্যেক সোমবার উপোস থাকতেন। মূর্তি পূজারি হিন্দু যুগীরা ৪০ দিন পানাহার ত্যাগ করে চল্লিশে ব্রত পালন করতো।

Advertisement

- মূর্তি পূজারী হিন্দুদের মতো জৈন সম্প্রদায়ের লোকেরাও উপবাস করতো। তাদের মতে, ৪০ দিন ধরে একটি করো উপবাস হয়। গুজরাট ও দাক্ষিনাত্যের জৈনরা কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি করে উপবাস করে।

- প্রাচীন মিসরীয়রাও উপবাস করতো।

- প্রাচীন গ্রীসে শুধু নারীরা থিমসোফিয়ার ৩ তারিখ উপবাস করতো।

- ফার্সিয়ানতের ধর্মগ্রন্থের এক শ্লোক দ্বারা জানা যায়, তাদের ধর্মেও উপবাস ছিল। বিশেষ করে তাদের ধর্মগুরুদের জন্য পাঁচ সালা উপবাস আবশ্যক ছিল। (ইনসাইক্লোপেডিয়া অফ ব্রিটেনিকা)

কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় এ কথা সুস্পষ্ট যে, রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির ওপরই ফরজ হয়নি বরং আগের নবি-রাসুলদের ওপরও রোজার বিধান ছিল। শুধু তা-ই নয়, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পরবর্তী যুগে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোজা রাখার প্রচলন অব্যাহত ছিল। যারা নিজ নিজ ধর্মানুসারে ব্রত বা উপবাস করতো।

আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমার জন্য এ রোজার বিধান ফরজ করেছেন। আর রমজানের উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

রমজান আসতে আর একমাসও বাকি নেই। তাই রমজানের রোজার প্রস্তুতি এখন থেকেই নেয়া জরুরি। বিশেষ করে এ শাবান মাসের রোজা রাখার মাধ্যমেই সে প্রস্তুতি শুরু করা উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবুয়ত ও রেসালাতের অন্যতম আদর্শ রোজা পালনে নিজেদের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। রমজানজুড়ে  রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম