সাজেদুর আবেদীন শান্ত
Advertisement
সোনাতলার অতি পরিচিত মুখ হুমায়ুন। সবাই তাকে ‘চা হুমায়ুন’ নামেই চেনেন। সোনাতলা বন্দরের এপাশ থেকে ওপাশ তার অগাধ বিচরণ। ফোন পেলেই তিনি দু’হাতে চায়ের ফ্লাক্স ও ব্যাগ নিয়ে হাজির হন বিভিন্ন দোকানে বা অফিসে। লাল চা ও দুধ চায়ের সাথে পান-সিগারেট থাকে ব্যাগে।
হুমায়ুন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে। বাবা পেশায় কৃষক। মা মরিচমতি বেগম গৃহিণী। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হুমায়ুন তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। অল্প-শিক্ষিত বাবার অর্থনৈতিক দুর্বলতা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখতে দেয়নি। তবুও হুমায়ুন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নিজের চেষ্টায় পড়েছেন।
পরে হুমায়ুন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে চলে আসেন সাঘাটার পাশের জেলা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায়। সেখানে কাজ নেন একটি খাবার হোটেলে। কম বেতনে টানাটানিতেই সংসার চলতে থাকে। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে হুমায়ুন চাকরি হারান। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন, সে চিন্তা করতে থাকেন।
Advertisement
অনেক ভেবে-চিন্তে হুমায়ুন ঠিক করেন, তিনি ফেরি করে চা বিক্রি করবেন। সেভাবে যদি মানুষকে বাড়ি-বাড়ি বা বিভিন্ন অফিসে-দোকানে গিয়ে চা সরবরাহ করেন, তাহলে সবাই নিজ জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা খেতে পারবেন। এতে তার উপার্জনের পথও তৈরি হবে। তাই সে দুটি ফ্ল্যাক্স কিনে একটিতে দুধ চা ও অন্যটিতে লাল চা নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।
এ ব্যাপারে হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘হোটেলে চাকরি হারানোর পর আমি প্রায় তিন মাস বসে ছিলাম। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার সামলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। তাই অনেক চিন্তা-ভাবনা করি যে, কীভাবে সংসার চালাবো? অবশেষে অনেক ভেবে-চিন্তে ফেরি করে চা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি বলেন, ‘সোনাতলা উপজেলা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় কাগজে আমার ফোন নম্বরসহ লিখে দেই, ‘ফোন করলেই পাওয়া যাবে চা’। এ ছাড়াও বিভিন্ন অফিসে গিয়ে বলে আসি আমার ব্যবসার কথা। সেইসঙ্গে মোবাইল নম্বরও দিয়ে আসি।’
প্রথমদিকে হুমায়ুন তেমন সাড়া না পেলেও এখন দৈনিক প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার চা বিক্রি করেন। সেইসঙ্গে এখন চায়ের পাশাপাশি পান ও সিগারেট রাখেন ব্যাগে।
Advertisement
হুমায়ুন আরও বলেন, ‘বর্তমানে এ টাকা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি। আমি প্রথম লকডাউন থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাস হলো এ কাজ করছি। আমি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাগজের কাপে চা দিয়ে থাকি। তাই সবার কাছেই আমার চা জনপ্রিয়।’
হুমায়ুনের ফোনে বেশিরভাগ চায়ের অর্ডার আসে বেসরকারি অফিস ও বিভিন্ন রকমের দোকান থেকে। মহামারী করোনাভাইরাস কমে গেলে তিনি অন্য ব্যবসা করার চেষ্টা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/এএসএম