এদেশের কয়েক প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে তাকে বাবা-চাচা বা দাদা-নানার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখে। সাদা চুল দাড়িতে চমৎকার অভিনয় নিয়ে হাজির হতেন তিনি। কিছু চরিত্রে তিনি ছিলেন বিকল্পহীন।
Advertisement
বলছি অভিনেতা সিরাজুল ইসলামের কথা। আজ এই অভিনেতার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র তথা সমগ্র সংস্কৃতি অংগনের মানুষদের কাছে ছিলেন সবার প্রিয় সিরাজ ভাই। তবে আজ আর কারোর স্মরণে হয়তো আসেন না তিনি। তাকে নিয়ে শোনা যায় না কোনো আলোচনাও। এই অভিনেতার জন্ম ও মৃত্যুদিনগুলোও চলে যায় নিরবে।
মুছে গেছেন হয়তো অনেক দর্শকের স্মৃতি থেকেও। তবে এটুকু বলা যায়, তার নাম বা মুখ দেখলে অনেকেই নস্টালজিয়ায় মজে যাবেন।
Advertisement
২০১৫ সালের ২৪ মার্চ সকাল নয়টায় রাজধানীর নিকেতনে নিজের বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেনে। মৃত্যুর আগে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন এই অভিনেতা।
সিরাজুল ইসলাম জন্মেছিলেন ভারতের হুগলিতে, ১৯৩৭ সালের ১০ অক্টোবর। তার বাবা আবদুল হক ও মা আরিফান্নেসা। বাবা ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন ও ঢাকার বাংলাবাজারে বসবাস শুরু করেন। তখন সিরাজুল নবম শ্রেণীর ছাত্র।
ঢাকায় এসে কিশোরী লাল জুবিলী স্কুলে ভর্তি হন ও এখান থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর কায়দে আজম কলেজ (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী কলেজ) পড়াশোনা করেন।
পেশায় সিরাজুল ইসলাম ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। চাকরির পাশাপাশি করতেন অভিনয়। ‘অবসর’ নামের একটি থিয়েটারও পরিচালনা করতেন তিনি। জানা যায়, একসময় করাচির ইস্টার্ন ফিল্ম পত্রিকায় ঢাকাস্থ চলচ্চিত্র প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
Advertisement
তার প্রথম অভিনীত সিনেমা ‘রাজা এল শহরে’ মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমার মধ্যে আছে ‘ধারাপাত’, ‘নাচঘর’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘শীত বিকেল’, ‘অনেক দিনের চেনা’, ‘বন্ধন’, ‘ভাইয়া’, ‘রূপবান’, ‘উজালা’, ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘হীরামন’, ‘উলঝন’, ‘নয়নতারা’, ‘আলীবাবা’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘গাজী কালু চম্পাবতী’, ‘জিনা ভি মুশকিল’, ‘কাঞ্চন মালা’, ‘নিশি হলো ভোর’, ‘ভাগ্যচক্র’ ইত্যাদি।
১৯৮৪ সালে চাষী নজরুল ইসলামের চন্দ্রনাথ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান।
তিনি কয়েকটি ছবি ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। মঞ্চ, বেতার ও টিভির সুপরিচিত অভিনেতা ছিলেন তিনি।
এলএ/এএসএম