দেশজুড়ে

ফেনীর ৩ পৌরসভায় ফের জিততে চায় আ.লীগ

নির্বাচনের আগাম হাওয়া বইছে ফেনীর সব কটি পৌরসভায়। প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণার পর থেকে বিষয়টি আলোচনার সৃষ্টি করে। বিএনপি-জামায়াতের কোনো ধরনের উচ্চ-বাচ্য না থাকলেও সরকারি দল সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথম ধাপে দেশের ২৪৫টি পৌরসভায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সে হিসেবে ফেনী পৌরসভা, দাগনভুঞা পৌরসভা ও পরশুরাম পৌরসভায় প্রথম ধাপে ভোট সম্পন্ন হবে। কমিশনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পর থেকে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে এ তিনটি পৌরসভায় প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানায়। গত নির্বাচনে এ তিনটি পৌরসভার মধ্যে সবকয়টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। তবে ফেনী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী সাংসদ নির্বাচিত হলে নির্বাচন কমিশন পদটি শুন্য ঘোষণা করেন। পরে উপনির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলা উদ্দিন পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এবারও সব কয়টিতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে চায়। ফেনী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২৭.২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। এ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের কোনো প্রার্থীর আনাগোনা না থাকলেও সরকারি দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের শেষ খেলা খেলতে চান বর্তমান মেয়র হাজী আলা উদ্দিন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরাশাদের ঘনিষ্ঠজন পার্টির যুগ্ম-মাহাসচিব হাজী আলাউদ্দিন মেয়র পদ টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে তৎকালীন মেয়র নিজাম উদ্দিন হাজারী ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মেয়রপদ শুন্য হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের দেয়া তফসিলে উপ-নির্বাচনে হাজী আলাউদ্দিন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বিএনপি প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলালকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। তাদের দাবি, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর কথার বাইরে চুল পরিমাণ নড়তেও সাহস করেননি তিনি। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটৌকল কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আলাউদ্দিন চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে কাজ শুরু করলেও দল ত্যাগের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না তার। বরং মেয়র নির্বচনের পর নিজ দল জাতীয় পার্টিকে গুছাতে দলীয় কর্মকাণ্ডে তৎপর ছিলেন হাজী আলাউদ্দিন। ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ফেনীর মিজান ময়দানে সমাবেশ করেন। এসময় হাজী আলা উদ্দিন তাকে স্বর্ণের লাঙ্গল উপহার দেন। এরশাদ সরকার পতনের পর বড় নেতারা দল ছাড়লেও হাজী আলাউদ্দিন ছিলেন অনঢ়। ১৩ নভেম্বর শুক্রবারের যুবলীগের সমাবেশে হাজী আলাউদ্দিন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলীয় টিকিট নিশ্চিত করেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। এদিকে বিএনপির সকল নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় মাঠে কোনো নেতার প্রচার প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। তবে সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন পৌর বিএনপির সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল। এবারও তিনি দল থেকে মনোনোয়ন পাবেন বলে বিএনপির একাধিক নেতা জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান, যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল ও পৌর সভাপতি আইনুল কবির শামীম মরিয়া হয়ে উঠেছেন। জেলার প্রথম শ্রেণির পৌরসভা দাগনভূঞাঁ। ২৪.৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়োতনের এ পৌরসভাতে রয়েছে মোট ৯টি ওয়ার্ড। বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক খান এ বছর ফের দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন এমনটিই আশা করছে তার সমর্থকরা। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন গতবারের প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল হুদা হুদন, আবুল কায়েস রিপন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়েজ আহমদ ও যুবলীগ নেতা মো. আলমগীর।বরাবরের মতো বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ভাই সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন।পরশুরাম পৌরসভাটি ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটৌকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের চাচাতো ভাই বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলই আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী।তার বিপক্ষে বিএনপি থেকে সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবের নাম শোনা যাচ্ছে।এছাড়া জামায়াত দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ না থাকায় তাদের প্রার্থী হবার সম্ভাবনা কম । এর বাইরে অন্য নিবন্ধিত দলগুলো থেকে অতীতে কোনো প্রার্থী ছিল না। এবারও প্রার্থী হবার সম্ভবনা কম বলে একাধিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।এমজেড/এমএস

Advertisement