একুশে বইমেলা

বইমেলায় মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ’র ‘বিষাদিতা’

 

নকশাল-সর্বহারা তথা চরমপন্থীদের প্রতাপে একসময় প্রশাসন থেকে সর্বস্তরের মানুষের ঘুম হারাম হতো। পত্রিকা খুললেই মিলতো খুন কিংবা ক্রসফায়ারের খবর। দিনে দুপুরে রাস্তায় পড়ে থাকতো মানুষের লাশ। শ্রেণীশত্রু খতম কিংবা র্যাব -পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত লাশের মিছিল লেগে থাকতো জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে। এসব খুন-খারাবি প্রত্যাক্ষ করা ছিল দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর নিত্যকার রুটিন।

Advertisement

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলো আজ শংকামুক্ত। নির্বিঘ্নে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। ফলে বর্তমান প্রজন্ম জানে না সেই অন্ধকার দিনগুলোর কথা। অন্যরাও ভুলতে বসেছে।

তরুণ কথাসাহিত্যিক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ সেই সময়কে তুলে এনেছেন। মলাটবদ্ধ করেছেন একটি উপন্যাসে। যার নাম ‘বিষাদিতা।’ বইটি প্রকাশ করেছে দাঁড়িকমা প্রকাশনী। বর্তমানে রকমারি.কম এ প্রি-অর্ডার চলছে। ২৫ মার্চ থেকে পাওয়া যাবে বইমেলায়, দাঁড়িকমার ৪৫৭ নং স্টলে।

উপন্যাস নিয়ে মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ বলেন, ‘বিষাদিতা একটি সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, ও রোমাঞ্চকর উপন্যাস। বইয়ের চরিত্রগুলো নির্মিত হয়েছে ২০০৫-২০০৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। সেসময় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে চরমপন্থীদের অবাধ বিচরণ। বলা চলে মফস্বল এলাকা তাদের হুকুমেই চলতো। তখন ছোট হলেও স্বভাববশত আমার চোখ-কান খোলা থাকতো। ঘুম থেকে উঠে শুনতাম ক্রসফায়ার কিংবা শ্রেণীশত্রু খতমের নামে মানুষ হত্যার খবর। আমার উৎসুক মন খুঁজে বেড়াতো সেই খবরের ভেতরের খবর।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘বিষাদিতার চরিত্রগুলোর মাধ্যমে চরমপন্থীদের কার্যকলাপ ও তার সামাজিক প্রভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এর পাশাপাশি সম্পর্ক, সংকট ও সম্ভবনার গল্প তো আছেই।’

তরুণ কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘বিষাদিতার চরিত্রগুলো সমাজের আর সব চরিত্রের মতো হলেও এদের চলন-বলন ও চিন্তাধারা পাঠকের মনে দাগ কাটবে বলে আমার বিশ্বাস।’

তিনি জানান, টানা দুই বছর সময় নিয়ে বইটি লিখেছেন। এজন্য তাকে ছুটে যেতে হয়েছে সর্বহারা-নকশাল অধ্যুষিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে, বিভিন্ন বই ও আর্টিকেল পড়েছেন উপন্যাসের সঙ্গে তৎকালীন পরিবেশ-পরিস্থিতিকে জীবন্ত করার নিমিত্তে।

বিষাদিতার প্রকাশক আব্দুল হাকিম নাহিদ বলেন, ‘বিষাদিতা এমন একটি প্রেক্ষাপটকে ফুটিয়ে তুলেছে যা বাংলাদেশের সাহিত্যে এই প্রথম। মহাশ্বেতা দেবীর হাজার চুরাশির মা পড়ে জেনেছিলাম নকশালদের জন্ম ও কর্ম সম্পর্কে। কিন্তু বাংলাদেশে এসে নকশালরা কেমন ছিল? তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি বদলে গিয়েছিল? রাতের আঁধারে নিজেকে যমদূত ভাবা এই নকশাল-সর্বহারারা কি চারু মজুমদার, কানু স্যানালের নাম শুনেছে কোনোদিন? সেইসব প্রশ্নের উত্তরের পাশাপাশি নকশালদের কর্মকাণ্ড ও চিন্তাধারা নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে উঠে এসেছে এই বইয়ে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তরুণ এই লেখকের জাদুকরী বর্ণনা ও লেখনশৈলী।’

Advertisement

প্রজন্মের তরুণ লেখকদের দেখা যায় কাউকে না কাউকে অনুসরণ, অনুকরণ করতে। কিন্তু মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ স্বতন্ত্র এক বর্ণনাশৈলীর নিয়ে হাজির হয়েছেন বলে জানান দাঁড়িকমার প্রকাশক আব্দুল হাকিম।

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ ২০১০ সাল থেকে দেশের সবকয়টি জাতীয় দৈনিকে একযোগে রম্য লিখতে শুরু করেন। সাংবাদিকতা করেছেন দেশের প্রথম সারির কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে। তিনি এখন পর্যন্ত ছয়টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিষাদিতা তার ষষ্ঠ গ্রন্থ ও তৃতীয় উপন্যাস। তার উপন্যাস ‘চুড়ি অথবা চেয়ারের গল্প’, ‘নিপাতনে সিদ্ধ’ পাঠক ও বোদ্ধা মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিষাদিতা নিয়ে তিনি প্রচণ্ড আশাবাদী।

ইএ/এমএস