দেশজুড়ে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে, কয়েক হাজার ঘর পুড়ে ছাই

কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন প্রায় ছয় ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের সদস্যদের প্রচেষ্টায় সোমবার (২২ মার্চ) রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

Advertisement

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েক হাজার ঘর পুড়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় এখনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা এখনও জানা যায়নি।

সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বালুখালী ক্যাম্প ৮-ই, ডব্লিউতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বাতাসের গতি বেশি হওয়ায় আগুন দ্রুত ৯ এবং ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণহানি এড়াতে বিভিন্ন ব্লক থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গারা দ্রুত সরে যান।

ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার সৈয়দ মো. তাহফিম রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, বিকেল ৪টার দিকে বালুখালী ৮ই ক্যাম্পে আগুন লাগে। তা দ্রুত ৮ ডব্লিউ ক্যাম্পে ছড়ায়। বাতাসের বেগে তা ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৯ ও ১০ নম্বর ক্যাম্পে। খবর পেয়ে উখিয়া-টেকনাফ-রামু ও কক্সবাজার সদর থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।

Advertisement

তিনি আরও জানান, আগুনের ভয়াবহতা বাড়ার সঙ্গে রোহিঙ্গারা ছোটাছুটি করতে থাকেন। তারা শুধুমাত্র ব্যবহারের কাপড় ও সামনে পাওয়া প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন।

তবে কী পরিমাণ রোহিঙ্গার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বলতে পারেননি আইএসসিজি কমিউনিকেশন অফিসার তাফহিম। কিন্তু ক্যাম্পভিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তৈরি একটি শিটের হিসাব অনুসারে বালুখালির ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ছয় হাজার ২৫০। আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন। ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ছয় হাজার ৬১৩টি। আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন। ক্যাম্প ৯-এ বাড়ি সাত হাজার ২০০ টি। আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন। ক্যাম্প ১০-এ বাড়ি ৬ হাজার ৩২০টি এবং লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন।

আগুন লাগার পর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসা রোহিঙ্গা আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের ওপর এত পরীক্ষায় কেন ফেলছেন বুঝে উঠতে পারছি না। মিয়ানমারের ক্ষত কাটিয়ে উঠার মাঝেই বাংলাদেশেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চরম আতঙ্কিত করছে।’

মো. রফিক উদ্দিন নামে অপর এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘৮ নম্বর ক্যাম্পে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। হঠাৎ করে এ আগুন ৮-ডব্লিউ, ৯ ও ১০ নম্বরে ছড়িয়ে পড়ে।’ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে বলে মন্তব্য তার।

Advertisement

একটি ট্রাঙ্ক ও বালতি নিয়ে পালানোর সময় লায়লা বেগম (৪৫) বলেন, ‘আজকের আগুনের ভয়াবহতা আবারও আমাদের মিয়ানমারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।’

রাত পৌনে ৮টার দিকে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর একটি টিম কাজ করছে। প্রাণহানি এড়াতে বিভিন্ন ব্লক থেকে রোহিঙ্গা সদস্যদের সরিয়ে নেয়ার কাজও চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা সড়কের ওপর চলে আসায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গায় স্থানীয়রা চরম ক্ষতির মুখে পড়লেও আজকের অগ্নিকাণ্ড ২০১৭ সালের মতোই ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের মানবিক করে তুলেছে। যার যা আছে তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক সহযোগিতা দিচ্ছে।

এএএইচ