বিশেষ প্রতিবেদন

ভোরের পাখিদের আপ্যায়নে জয়দেব

ভোরের সূর্যটা ওঠার আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা আসে। আসে দল বেঁধে দিনের শুরুর আহারের আশায়। পাখিপ্রেমী জয়দেবের চারপাশে তখন পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ, আর কিচির মিচির ডাকে মুখরিত। প্রতিবেশীদেরও ভোরে ঘুম ভাঙায় পাখিরা। এসব পাখি জয়দেবদের সকালের অতিথি হয়ে আসে। নিত্যদিনের অতিথি পাখিদের আপ্যায়নে নিমগ্ন হয় জয়দেব।এসময় অভ্যাস মতো জয়দেবের বাবা গোবিন্দ রায়ও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। গত পাঁচ বছর ধরে এই পাখিদের সকালের আহার জোগান বাবা-ছেলে মিলে। পাখির প্রতি জয়দেব ও তার বাবার এমন ভালোবাসা প্রতিবেশী লোকজন বেশ উপভোগ করেন। কলেজপড়ুয়া জয়দেবকে এলাকার ছোটরা ভালোবেসে ‘পাখি দা’ নামে ডাকে। এতে জয়দেব নিজে বেশ সুখ পান।পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার দক্ষিণবাজার সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে রোজ ভোর বেলায় বসে পাখির এমন অতিথিশালা। স্থানীয় ব্যবসায়ী গোবিন্দ রায় ও তার ছেলে জয়দেব রায় প্রতিদিন সকালে কয়েক শত পাখিকে খাবার দেন। সকাল হলেই এখানে চলে আসে পাখিগুলো। আবার খাবার খেয়ে চলেও যায়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এভাবেই চলছে পাখি আপ্যায়নের কার্যক্রম। প্রতিদিন ভোর বেলায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পাখিরা এখানে আসে। তখন পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিধার।খাবারের আশায় শালিক পাখি আসে বেশি আর আসে কবুতর, কাক। সঙ্গে চড়ুই আর দোয়েলেরা আসে। শত শত পাখিদের নিত্য ভোরে  জয়দেব ও তার বাবা মিলে পরম যত্নে খাবার দেন। তখন মুগ্ধ মায়াবী প্রাণের মেলা বসে সেখানে।পাখিপ্রেমী জয়দেব জানান, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে তার বাবা গোবিন্দ রায় সকালে কিছু পাখিকে খাবার দিতেন। এরপর আস্তে আস্তে অনেক পাখি আসা শুরু করে। এখন রীতিমতো প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে সাত থেকে আটশ পাখিকে খাওয়াচ্ছেন। যদিও স্থানীয় মুরব্বিরা বলেন, এখানে আসা পাখির সংখ্যা হাজারেরও  বেশি হবে।পাখিদের খাওয়ানোর জন্য তাদের ভালোই আয়োজন করতে হয়। জয়দেবদের একটি রেস্টুরেন্ট আছে। নাম স্বর্ণচূড়া। ওই রেস্টুরেন্ট থেকেই তৈরি করা হয় পাখিদের খাবার। পরোটা রুটি ইত্যাদি আলাদা করে ভেজে রাখেন দোকানের কর্মচারীরা। প্রতিদিন কাজ শেষে এই খাবারগুলো তৈরি করে রাখা হয়। সকাল হলেই বাবা কিংবা ছেলে এসে পাখিদের খাবার দিয়ে যান। প্রতিদিন পাখির খাবারের জন্য প্রায় চারশত টাকা খরচ হয়।স্থানীয় বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে সকাল বেলা। খাবার খেয়ে আবার চলে যায়। পাখিগুলো যখন আসে তখন এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। প্রায় এক থেকে দেড় হাজার পাখির দল বেঁধে আসা যাওয়া চলে। বিষয়টা অনেক আনন্দের।’পাখিদের খাবার দেয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে কি-না জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘হ্যাঁ সময় তো আছেই। এখন ভোর ৫টা ৪০ মিনিট থেকে সকাল ৬টার মধ্যে খাবার দিয়ে দেই। মূলত সময়টা হলো ভোরের আলো যে সময়টাতে ফুটতে শুরু করে ঠিক সেই সময়টাতেই ওরা সব চলে আসে।’পাখিদের এই খাবারটা দেয়া হয় স্বর্ণচূড়া রেস্টুরেন্ট থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায়। পাখিদের খাবার দেয়া শেষ হলেই খুলে যায় রেস্টুরেন্ট।ব্যস্ত হতে শুরু করে লোকালয় জীবন। এই ব্যস্ততা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়দেবের অতিথিরাও ডানা মেলে দেয় শূন্যে। দিনভর এসব পাখিরা প্রকৃতি থেকে খাবার সংগ্রহ করে। তবে সকালের খাবার খেতে ওরা জয়দেবের অতিথিশালায় আসে।হাসান মামুন/বিএ

Advertisement