দেশজুড়ে

কেউ খাবার না দিলে না খেয়েই দিন যায় বিবি আয়েশার

বিবি আয়েশা বেগমের স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১৮ বছর আগে। মারা গেছেন তার তিন মেয়েও। ৯০ বছরের আয়েশা বেগম হাইমচরের দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের পুরাতন ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ৮নং ওয়ার্ডের বাদামতলী এলাকার বাসিন্দা।

Advertisement

স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার শক্তিটুকু তার নেই। তারপরও চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন সংগ্রাম। একমাত্র ছেলে জিন্না মিয়া (৪৫) প্রতিবন্ধী। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও ছেলেকে দেখাশুনা করতে হয় আয়েশা বেগমকে।

অন্যের দেয়া খাবারেই জীবন চলে তার। বয়সের ভারে ভিক্ষাও করতে পারেন না।

প্রতিবেশীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও দুজন মানুষকে চালানো সকলের জন্যই কষ্টসাধ্য। তাই অনেক সময় না খেয়ে দিন কাটাতে হয় মা-ছেলেকে।

Advertisement

অনেক কষ্টে তিন মেয়ে মাকসুদা বানু, পরীবানু ও কসবানুর বিয়ে দিয়েছিলেন। মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে থাকলেও টাকা-পয়সা দিয়ে তাকে সাহায্য করতেন। কিন্তু একে একে তিন মেয়েই মারা যান। এরপর থেকেই শুরু হয় আয়েশা বিবির করুণ জীবন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আয়েশা বেগমের ভিটেমাটিসহ সবকিছুই চলে গেছে মেঘনার পেটে। ৮-১০ বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব তিনি।

পরে মাথা গোঁজার জন্য চলে আসেন হাইমচরের মেঘনার পাড়ে। স্থানীয় তবিউল্লাহ তালুকদারের জায়গায় বছরে ৫০০ টাকায় জমি ভাড়া নিয়েছেন তিনি। সেখানে টিনের একটি ভাঙা ঘর তৈরি করে কোনোমতে বাস করছেন।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি টিনের ঘরে বসবাস করছেন আয়েশা বেগম। টিনগুলোতেও জং ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। পুরো ঘরজুড়ে মাকড়সার জাল। ঘরে অল্প কয়েকটি আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়া রয়েছে একটি নড়বড়ে খাট।

Advertisement

ঘরটি এতটাই সংকীর্ণ যে দুজন হাঁটাও মুশকিল। রাতের আঁধারে আলোর ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে একটি মাত্র কুপি।

এ সময় দেখা যায়, কোনো এক প্রতিবেশী তাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছেন। দেখেই বোঝা গেল সেখানে রয়েছে একজনের খাবার। তবে এরমাঝেও তাদের মুখে ছিল আনন্দের হাসি।

প্রতিবেশীরা জানান, তারা সাধ্য অনুযায়ী, সাহায্য করার চেষ্টা করেন। আগে তিনি কাজ করে খেতেন। এখন তো বয়সের জন্য সেটাও পারেন না।

আয়শা বেগম বলেন, বাবারে এই বয়সে এসে এমন কষ্ট করতে হবে তা কখনো চিন্তা করিনি। ছেলেটিও প্রতিবন্ধী। কিছু একটা করে যে খাওয়াবে সে সামার্থ্যও তার নেই। উল্টো তাকে আমাকেই খাওয়াতে হয়।

‘আগে তো আশপাশের সবার বাড়িতে গিয়ে খাবার নিয়ে আসতাম। এখন আর যেতে মন চায় না। শরীরে শক্তি কমে গেছে। যদি কেউ দেয় তাহলে খেতে পারি। না দিলে চুপচাপ না খেয়ে পড়ে থাকি।’

তিনি বলেন, সরকার আমাকে বয়স্ক ভাতা দেয়। তবে এই যুগে মাসে ৫০০ টাকা দিয়ে কী আর করা যায়? যদি এই বুড়া মানুষটারে কেউ একটু সাহায্য করত তাহলে জীবনের শেষ সময় একটু শান্তি পাইতাম। শুনেছি সরকার নাকি গরিবদের ঘর দিচ্ছে। যদি একটা ঘর পাইতাম...।

সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক রজত শুভ্র সরকার বলেন, বিবি আয়েশা বয়স্ক ভাতার আওতাধীন। তার ছেলে জিন্না মিয়াকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।

বিষয়টি জানতে পেরে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চাই থোয়াইহলা চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করা হবে।

নজরুল ইসলাম আতিক/এসএমএম/জিকেএস