একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এটিএম নাসির আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দুই সাক্ষী তাদের জবানবন্দী পেশ করেছেন।জবানবন্দীতে মো. শাহ আলম বলেছেন, শামসুদ্দিন আহম্মেদ আমার বন্ধু পরেশকে গুলি করে হত্যা করেছে। অন্য সাক্ষী মো. মাহাতাব উদ্দিন তার জবানবন্দীতে বলেছেন, রাজাকাররা আমার ভাই ফজলুল হককে ধরে নেয়ার পরও আজ পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রীয় খরচে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে নিয়োজিত আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করেন। পরে আদালত পরবর্তী সাক্ষী গ্রহণের জন্য রোববার (২৯ নভেম্বর) দিন ধার্য করেন।সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী। সাক্ষ্যগ্রহণে সাহায্য করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে আসামিদের আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান সাক্ষীদের জেরা করেন।দশম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মো. শাহ আলম। বয়স আনুমানিক ৬৩ বছর। গ্রাম - গুজারদিয়া রামনগর, থানা- কমিরমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ। ১৯৭১ সালের আমি করিমগঞ্জ পাইলট হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ১৯৭৪ সালে ওই স্কুল থেকে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। স্কুলে ১৯৭০ সালে আসামি শামসুদ্দিন আহম্মেদ দশম শ্রেণিতে পড়াশুনা করতো, আমি তাকে চিনতাম। একাত্তরের ৭ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে আমার বন্ধু পরেশকে নিয়ে আমার বাড়ির সামনে নদীর পাড়ে রাস্তার ধারে বসে কথা বলছিলাম। এর আনুমানিক পাঁচ মিনিট পর পরেশ সেখান থেকে কাজে কথা বলে চলে যায়। পরেশের বাড়ি এবং আমাদের বাড়ি কাছাকছি। পরেশ চলে যাওয়ার আনুমানিক ৫ মিনিট পর আসামি শামসুদ্দিন আহম্মেদ কয়েকজন রাজাকার নিয়ে আমার নিকট আসেন। ওই সময রাজাকারদের সঙ্গে একজন বৃদ্ধ লোকের মাথায় গুলির বাক্স ছিল। তখন রাজাকারা তার সঙ্গে থাকা গুলির বাক্সটি আমার মাথায় দিয়ে ওই বৃদ্ধ লোকটিকে ছেড়ে দেয়। আমাকে নিয়ে সামনের দিকে আগাতে থাকে।সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন ,আনুমানিক দুই মিনিট হাঁটার পরে আমার বন্ধু পরেশের বাড়ির সামনে যাই। সেখানে গিয়ে পরেশকে ডাটা ক্ষেত নিরাইতে দেখি। তখন আসামি শামসদ্দিন আহম্মেদ পরেশকে বলেন, “এই দিকে আয়”। তখন পরেশ শামসু্িদ্দন আহম্মেদের নিকট আসলে আসামি তাকে জিজ্ঞাসা করে তোর নাম কী? তখন পরেশ তাকে বলে আপনি আমার নাম জানেন না। তখন আসামি শামুদ্দিন আহম্মেদ তাকে বলেন, “এই শালা মালাউন, আমি তোর নাম জানবো কী করে? তখন আমি দেখতে পাই আসামি শামসুদ্দিন আহম্মেদ তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে আমার বন্ধু পরেশকে বুকে গুলি করেন। সে মাটিতে পড়ে যায়। তখন আমি ভয়ে কাঁপছিলাম। কিছুক্ষণ পরে আমার বন্ধু পরেশ মারা যায়।অন্যদিকে এগারতম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মো. মাহতাব উদ্দিন। বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। আমার গ্রাম- আতকাপাড়া, থানা- করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ। আমি গুজাদিয়া শিমুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী হিসাবে অবসর গ্রহণ করি। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। ১৯৭০ সালে আমরা পাঁচ ভাই আট বোন ছিলাম। আমার ভাইদের মধ্যে বড় ছিলেন শহীদ ফজলুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে আমার বড় ভাই ফজুলর রহমান আমার ছোট ভাই মো. বজলুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে করিমগঞ্জ বাজারে একটি দর্জির দোকোনে শার্ট কেনার জন্য যায়। এ সময় রাজাকাররা আমার বড় ভাইয়ের শরীর তল্লাশি করেন এবং ডাক বাংলোতে নিয়ে যান।সাক্ষী আরও বলেন, ডাক বাংলোতে গিয়ে দেখি সেখানে আসামি গাজি আব্দুল মান্নানকে চেয়ারে বসে রয়েছেন। পাশে আমার বড় ভাই ফজলুর রহমান। তার গায়ে নির্যাতনের চিহ্ন। তখন আমার ভাই জানান, রাজাকার আজহারুল আমাকে চিনিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে আমার বাবা আসামি আজহারুল ইসলামের বাবা রহিম মৌলভীর বাসায় নিয়ে যায়। রহিম মৌলভী জানান, টাকা দিলে তার ভাইকে ছেড়েে দেয়া হবে। এক পর্যায়ে আমরা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে রহিম মৌলভীর কাছে যাই। কিছুক্ষণ পরে তারা এসে বলে ফজলুর রহমানকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর পর আমরা বড়িত চলে আসি। আজ পর্যন্ত আমার ভাইকে আর পাইনি। এই রাজাকাররাই পরেশকে গুলি করে হত্যা করেছে।এফএইচ/বিএ
Advertisement