জাতীয়

রায় কার্যকরে দেশ অভিশাপ মুক্ত হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি, রায়ও কার্যকর করছি। তারা যে অপরাধ করেছে সেই অপরাধের সীমা নেই। আমরা মনে করি এই বিচার ও রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে একাত্তরে স্বজনহারারা শান্তি পাবেন। আমরা যদি বিচার করতে না পারি দেশ অভিশাপ মুক্ত হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে।সোমবার রাতে জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি । গত ৮ নভেম্বর শুরু হওয়া অধিবেশনটি ১২ কার্যদিবসে রাতে শেষ হয়। সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকার অর্জন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে আজ দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়েছি। দেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করতো না, দেশকে যারা পরাধীন করে রাখতে চেয়েছিল, যারা দেশের বিজয় মেনে নিতে পারেনি- তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। যারা হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিল তাদের সহায়তায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হযেছিল। তারপর যারা ক্ষমতায় আসে তাদের সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক রাতে ১০ জনকে পর্যন্ত ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। সামরিক ক্যু হয়েছে, বিচারের নামে প্রহসন করে সামরিক অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে।  হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, বিচারও শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ’৭৫ এর পর হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমান একাধারে সেনা প্রধান ও  রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে তাদেরকে  প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তিনি শাহ আজিজুর রহমান, আব্দুল আলিমের নাম উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় পতাকা তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এরশাদের সময় তাদেরকে প্রতিযোগিতা এমনকি রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিযোগিতার সুযোগ দেয়া হয়। নির্বাচনের সুযোগ দিয়ে খুনি রশীদকে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ জঙ্গিদের স্থান হতে দেব না। তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কিছু দেশ এক সাথে বসে এমনকি আমাদের মন্ত্রীদের সাথে বসে বলে- বাংলাদেশে আইএস আছে। তাদেরকে বলতে চাই, অল্প ভুখণ্ডে যে বিশাল মানুষ বসবাস করছে সেখানে আমরা শান্তিপুর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পেরেছি। তিনি জেএমপির বোমা হামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, খালেদা জিয়ার সময় খুন খারাবি লেগেই থাকতো। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হচ্ছি। আইন শৃংখলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে যেন আইএস স্থান না পায় সেজন্য আমরা সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাব। পৃথিবীতে মুসলিম অধ্যুসিত দেশেই কিছু না কিছু গোলমাল হচ্ছে। বাংলাদেশ আমেরিকা থেকেও নিরাপদ। সকল রকমের মানুষকে সক্রিয় হতে হবে। তিনি সকলকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচন করে বলেন, ২০১৪ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছিল। স্কুল পুড়িয়েছে, প্রিসাইডিং অফিসার, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সদস্যকে হত্যা করেছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। ২০১৫ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬৫ জন নিয়ে দিনের পর দিন তিনি নিজ অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখলেন। অবরোধ এখনো প্রত্যাহার করেননি। অবরোধ হরতালের নামে তিনি প্রায় ৫০৮ জন মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছেন। এভাবে ধবংসযজ্ঞ চালিয়েছেন বাংলাদেশে। কিন্তু আন্দোলন আমরাও চালিয়েছি। আন্দোলনের নামে মানুষকে মারা, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন তিনি। আবার তিনি বিদেশে যাওয়ার পর বিদেশি মারা শুরু । দুইজনকে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। যারাই হত্যা করেছে খুঁজে বের করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা কারো কাছে মাথানত করবো না। মাথা উঁচু করে চলার জন্য যা যা করার করবো। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মধ্যমে বিজয় অর্জন করা জাতি। সেই জাতি কেন অন্যের কাছে হাত পাতবে ? পদ্মাসেতুর অর্থায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যেমন আইএস আইএস বলা হচ্ছে তখন দুর্নীতির কথা বলা হয়েছিল। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। এসেছি দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে। মানুষকে শোষণ নিপীড়ন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য এসেছি। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক করুক বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। আমাদেরকে নিম্ন আয়ের দেশ বলা হচ্ছে। আমরা নিম্ন থাকবো না । আমরা উপরে উঠবো। এইচএস/এসকেডি/এএইচ/পিআর

Advertisement