সাদা পানির ঝরনা। ২ কিলোমিটার দূর থেকে ঝরনার ঝিরঝির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। ঝরনার আশেপাশের এলাকা এতোটাই শান্ত যে, পাখিরাও বোধ হয় ডাকতে ভয় পায়! নির্জন ও কোলাহলহীন এ ঝরনায় ঘুরতে গেলেও আপনি জোরে কথা বলতে পারবেন না। তাহলেই জেগে যাবেন ধ্যানরত সাধু!
Advertisement
চুপ থাকার শর্তেই কেবল আপনি অনিন্দ্যসুন্দর এ ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। বলছি, ধুপপানি ঝরনার কথা। রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়ি নামক স্থানে অবস্থিত এ ঝরনা।
স্থানীয়রা দুপপানি ঝরনা নামেও ডেকে থাকেন। সমতল থেকে ঝরনার উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট। ১০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতার এই ঝর্ণার পানি নিচে পড়তে পড়তে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। এই জন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে ধূপপানি ঝর্ণা।
স্থানীয় শব্দে ধুপ অর্থ সাদা আর পানি যুক্ত করে এটিকে সাদা পানির ঝর্ণাও বলা হয়। এ ঝরনাটি যুগ যুগ ধরে মানুষের অগোচরেই ছিল। ২০০০ সালের দিকে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী গভীর অরণ্যে ধুপপানি ঝরনার নিচে ধ্যান শুরু করেন। পরে স্থানীয়রা বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠেন সন্ন্যাসীর বিষয়ে। তখনই ঝরনাটি সবার নজর কাড়ে।
Advertisement
এরপর থেকেই স্থানটি দর্শনীয় হয়ে ওঠে। একজন দু’জন করে বর্তমানে এটি ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের একটি স্থানে পরিণত হয়েছে। তবে এ ঝরনায় যেতে হলে মানতে হবে ওই একটি শর্তই। সেখানে অতিরিক্ত শব্দ না করার শর্তে স্থানটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।
জানা গেছে, এ ধুপপানি ঝরনার ওপরে একজন সাধুর আশ্রম আছে। সেখানে তিনি বেশিরভাগ সময়ই ধ্যানরত অবস্থায় থাকেন। স্থানীয় ভাষায় এ ধর্মযাজক সাধুকে বলা হয়-ভান্তে। সপ্তাহের ৬ দিন তিনি তার আশেপাশে কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি পছন্দ করেন না।
শুধু রবিবারে খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নেমে আসেন। তাই শুধু রোববারেই ঝরনায় পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি মেলে। যদি সপ্তাহের অন্য কোনোদিন কেউ যেতে চায়; তবে শব্দ না করার শর্তে সেখানে যেতে হবে!
ধুপপানি ঝরনায় পৌঁছাতে বেশ খানিকটা হাঁটতে হয়। দুর্গম ও খাড়া পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হবে। যাওয়ার সময় ধুপপানি পাড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আশেপাশের ছোট ছোট আদিবাসীদের দোকানে যাত্রা বিরতি নিয়ে পানি, ভুট্ট, ডিম এসব খেতে পারবেন। আড়াই ঘণ্টা হাঁটার পরেই ঝরনার শব্দ শুনতে পারবেন। সেখানে গেলে ঝরনার শব্দ ও দৃশ্য দেখে আপনি রীতিমতো ভাষা হারিয়ে ফেলবেন।
Advertisement
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-রাঙ্গামাটি পথে বেশ কয়েকটি বাস চলে। এর মধ্যে শ্যামলী পরিবহনের এসি বাসের প্রতি সিট ভাড়া ৯০০ টাকা, বিআরটিসি এসি বাসের ভাড়া ৭০০ টাকা। নন-এসি বাসের সিট ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
যদি চট্টগ্রাম থেকে যেতে চান তাহলে; শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে বিভিন্ন পরিবহণের লোকাল ও গেইটলকবাস পাওয়া যায়। ভাড়া তুলনামূলক বেশি হলেও গেইটলক বাসে উঠলে সময় কম লাগে। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সরাসরি বাস ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। বাসগুলো শহরের রিজার্ভ বাজার নামক স্থান পর্যন্ত যায়।
এরপর উলুছড়ি গিয়ে সেখান থেকে ছোট ডিঙি নৌকা নিতে হবে। প্রতি নৌকায় (৩০০টাকা) ৪/৫ জন বসতে পারে। গাইড ৫০০ টাকা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। ২০ মিনিটের মতো নৌকা ভ্রমণ করে হাঁটা শুরু করতে হবে। পথে ২টি পাহাড় পার করতে হবে।
থাকবেন কোথায়?
রাঙ্গামাটি শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরের পুরাতন বাস স্ট্যন্ড ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় লেকের কাছাকাছি হোটেলে উঠলে কাপ্তাই লেকের পরিবেশ উপভোগ করা যাবে। এ ছাড়াও কম খরচে বোডিং এ থাকা যাবে। বোডিংগুলোতে খরচ কম হলেও এগুলোর পরিবেশ খুব একটা ভালো নয়।
খাবারের ব্যবস্থা
রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন মানের খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখানে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বাঙালি, পাহাড়ি সব খাবার পাওয়া যায়। পছন্দের খাবার দাম অনুযায়ী খেতে পারবেন।
বিশেষ নির্দেশিকা
বিলাইছড়ি উপজেলাটি পার্বত্য অঞ্চলের অংশ হওয়ায় সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জাতীয় পরিচয়পত্র, কিংবা পাসপোর্টের ফটোকপি রাখতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করলেই ওইসব এলাকায় প্রবেশের অনুমতি মেলে।
জেএমএস/এএসএম