ধর্ম

আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে কি নামাজ হবে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শোনা সত্ত্বেও কোনো ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামাআতে নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকে; তার অন্যত্র (একাকি) নামাজ ক্ববুল হবে না।

Advertisement

ফরজ নামাজের জন্য এ নির্দেশনা। নামাজ ফরজ ইবাদত। এ ফরজ ইবাদত পালনের জন্য প্রতিদিন ৫ বার মসজিদে আজান দেয়া হয়। আজান শোনার পর মসজিদ যাওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

ফরজ নামাজের জন্য জামাআতের গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে কি আজান শোনার পর মসজিদে গিয়েই নামাজ আদায় করতে হবে? এ সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনাই বা কী?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এমনকি আজান শোনার পর মসজিদে না গিয়ে একাকি নামাজ পড়লে তা আদায় হবে বলেও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।হাদিসে এসেছে-> হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শোনা সত্ত্বেও কোনো ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামাআতে নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকে; তার অন্যত্র (একাকি) নামাজ ক্ববুল হবে না।সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ওজর কী?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা রোগ।’ (আবু দাউদ)

Advertisement

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শোনার পরও মসজিদে উপস্থিত হয়নি; অথচ তার কোনো ওজর নেই। তাহলে তার নামাজই হবে না।’ (বায়হাকি)

এ হাদিসে জামাআত থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে ভয়-ভীতি ও অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং যদি কোনো ভয়-ভীতি, বিপদ-আপদ বা অসুস্থতা না থাকে তবে মুয়াজ্জিনের আজান শোনার পর মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি।

তাছাড়া উল্লেখিত হাদিস দুটি দ্বারা জামাআতে নামাজ না পড়লে তা কবুল বা বিশুদ্ধ হবে না বলতে কমপক্ষে জামাআতে নামাজ পড়া ওয়াজিব বা আবশ্যক হওয়াই বুঝায়।

সে কারণে কোথাও নামাজের সময় হয়ে গেলে সেখানে যদি তিন বা তিনের বেশি ব্যক্তি উপস্থিত থাকে; তবে তাদেরকে অবশ্যই ওই ওয়াক্তের নামাজ জামাআতে আদায় করতে হবে। এটিই হচ্ছে হাদিসের দিকনির্দেশনা। আর হাদিসের নির্দেশনা সাধারণত ওয়াজিব হওয়াকেই বুঝায়।

Advertisement

জামাআতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব কতবেশি তা অন্ধ সাহাবি হজরত ইবনু উম্মে মাকতুমকে জামাআতে উপস্থিত হওয়ার দিকনির্দেশনা থেকেই প্রমাণিত। তাহলো-

> হজরত ইবনু উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো অন্ধ; আমার ঘরও (মসজিদ থেকে) দূরে অবস্থিত। আমার একজন পথচালকও আছে, কিন্তু সে আমার অনুগত নয়। এমতাবস্থায় আমার জন্য ঘরে নামাজ (সালাত) আদায়ের অনুমতি আছে কি?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি কি আজান শুনতে পাও? ইবনু উম্মে মাকতূম বললেন, ‘হ্যাঁ’, তিনি (বিশ্বনবি) বললেন, তাহলে তোমার জন্য (ঘরে নামাজ পড়ার) অনুমতির কোনো সুযোগ দেখছি না।’ (আবু দাউদ)

> হজরত ইবনু উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মাদিনাতে অনেক কীট-পতঙ্গ ও হিংস্র জন্তু রয়েছে (যা দ্বারা আক্রান্ত হবার আশংকা আছে, এরূপ অবস্থায়ও কি মসজিদে জামাআতে উপস্থিত হতে হবে?)।নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি ‘হাইয়্যা আলাস-সলাহ ও হাইয়্যা আলাল-ফালাহ’ শুনতে পাও? (শুনতে পেলে) অবশ্যই জামাআতে আসবে।’ (আবু দাউদ)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোনো ওজর-অজুহাত না থাকলে মুয়াজ্জিনের আজান শোনার পর মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা। ফরজ নামাজ আদায়ে জামাআতের ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। কেননা জামাআতে অংশগ্রহণের গুরুত্ব এ হাদিস থেকেও প্রমাণিত-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমরা সঠিকভাবে আজানের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি সবিশেষ নজর রাখবে। কেননা এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই হচ্ছে হেদায়াতের পথ। মহান আল্লাহ তাঁর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য হেদায়াতের এ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের (সাধারণ) ধারণা-‘স্পষ্ট মুনাফিক্ব ব্যতিত কেউ জামাআত থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। আমরা তো আমাদের মধ্যে এমন লোকও দেখেছি, যারা (দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে) দুই জনের (কাঁধের) উপর ভর করে (মসজিদে) যেত এবং তাকে (নামাজের) কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত।’

তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার ঘরে তার মসজিদ (নামাজের স্থান) নেই। তোমরা যদি মসজিদে আসা বাদ দিয়ে ঘরেই (ফরয) নামাজ আদায় কর তাহলে তোমরা তোমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতকেই বর্জন করলে। আর তোমরা তোমাদের নবির সুন্নাত ত্যাগ করলে অবশ্যই কুফরিতে জড়িয়ে পড়বে (নাউজুবিল্লাহ)।’ (আবু দাউদ)হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে- ‘(নবির সুন্নাত ত্যাগ করার অর্থই হলো) তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে’।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাআতে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। মুয়াজ্জিনের আজান শোনার পর সব কাজ থেকে মুক্ত হয়ে তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজে শরিক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস