মো. আব্দুল হামিদ ‘প্রভাষক’ হিসেবে আছেন একটি সরকারি কলেজে। তার বাবা মো. ইসমাইল হোসেন, মা হামিদা খাতুন। তিনি ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি বগুড়ার কাহালু উপজেলার শিকলওঁর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিকলওঁর মিজবাহুল উলুম আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০০৭ সালে দাখিল (এসএসসি) এবং ২০০৯ সালে আলিম (এইচএসসি) পাস করেন। এরপর ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। তিনিই প্রথম ওই মাদ্রাসা থেকে এ প্লাস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
Advertisement
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়ের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—
জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?আব্দুল হামিদ: ছোটবেলা সবার যেমন কাটে; তেমনই আট-দশটা ছেলের মতো আমারও শৈশব কেটেছে। ফুটবল খেলা, ক্রিকেট খেলা, দৌড়-ঝাঁপ করেই ছোটবেলা কেটেছে। শৈশবটা আমার দুরন্তপনায় ভরপুর ছিল।
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধতা ছিল কি?আব্দুল হামিদ: পড়াশোনা একদম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। আমার বাবা-মা দু’জনই খুব ভালো তবে নিরক্ষর। তারা ভাবতেন, তাদের সাথে কাজ করলেই ভালো হবে। পড়াশোনা করার কী দরকার? বাবার সাথে জমি-জমা দেখলেই তো পারি। তাই আমার বইগুলো ট্রাঙ্কে আটকে রাখতেন। আমি ট্রাঙ্ক ভেঙে সেগুলো বের করে পড়াশোনা করি। বই ট্রাঙ্কে রাখার মতো ঘটনা দু’বার ঘটেছিল। তবে আমার বাবা-মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তারা অনেক ভালো মানুষ। আমি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদ্রাসায় পড়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামে যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল, তা আমার জানাই ছিল না। এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে তা জানতে পারি। তারই অনুপ্রেরণায় গ্রাম থেকে এসে বগুড়ায় কোচিং করি। আমার মাদ্রাসা থেকে আমিই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। এর আগে কেউ পাননি।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?আব্দুল হামিদ: বিসিএসের স্বপ্ন বলতে, আমি জানতাম না যে বিসিএস বলে কিছু আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় সবার মুখে মুখে শুনতাম যে, বিসিএস বলে কিছু একটা আছে। আমি এসএম হলে থাকতাম। আমার রুমমেট ক্যাডার হলেন। তা দেখেই মূলত আমার স্বপ্নগুলো বড় হতে লাগল। তখন বুঝলাম যে, অন্যান্য জবের তুলনায় বিসিএস দিয়ে সমাজে মানুষের কাছে একটা মূল্য বা গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায়। এর জন্যই পরিকল্পনা ছিল, যেকোনো ক্যাডারেই হোক; যেন বিসিএসটা দিতে পারি এবং পাস করি।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—আব্দুল হামিদ: আমার প্রথম বিসিএস ছিল ৩৫তম। ৩৫তম বিসিএস একদম নতুন নিয়মে শুরু হয়। তারপরও যথেষ্ট প্রিপারেশন নিয়ে অংশগ্রহণ করি। প্রিলিতে পাস করলেও লিখিত পরীক্ষায় আর পারলাম না। ৩৬তম বিসিএসে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভায় কোয়ালিফাই হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সিলেক্ট হলাম। তারপর ৩৭তম, ৩৮তমতে ভাইভা দিয়েও ক্যাডার চেঞ্জ করতে পারিনি।
জাগো নিউজ: কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে আছেন? আব্দুল হামিদ: ৩৬তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে প্রভাষক হিসেবে আছি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে।
জাগো নিউজ: বিসিএসের প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হয়? ভাইভার ধরন সম্পর্কে যদি বলতেন—আব্দুল হামিদ: আমি যেভাবে প্রিপারেশন নিয়েছি, সে কথাই বলি। আমি মনে করি, ইংরেজি ও গণিতের বেসিক যাদের স্ট্রং তাদের জন্য বিসিএস কঠিন কিছু নয়। ক্লাস নাইন-টেনে পড়ার সময় শুধু পাস করার চিন্তা নিয়ে পড়লে, তা পরবর্তীতে ভোগান্তির কারণ হয়। এ ক্লাসগুলোতে ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত সম্পর্কে ভালোভাবে পড়লে বা বেসিক স্ট্রং হলে তাদের জন্য বিসিএস সহজ হয়। পাশাপাশি বাজারে পাওয়া যায় এমন বিসিএসের একসেট বই পড়লেও বিসিএসের প্রস্তুতি সহজ হবে। বিসিএসের জন্য আসলে ধৈর্য ধরে পড়ে যেতে হবে। নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের সংবাদপত্র পড়তে হবে। আর ভাইভায় নিজ জেলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অনার্সের বিষয়, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলেই ভালো করা সম্ভব।
Advertisement
জাগো নিউজ: কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন? আব্দুল হামিদ: আমার বাবা-মা একদম নিরক্ষর। তারা শুধু জানতেন, ছেলে চাকরি করবে। তাই তারা সেভাবে কোনো অনুপ্রেরণা দেননি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার মা পড়াশোনার খরচ বহন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা থেকে চাকরি পাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দু’জন খুব সাহায্য করেছেন। তাদের কথা বলতেই হবে। এ দু’জনের অবদান কখনোই ভোলা যাবে না। তারা হলেন—আব্দুল ওহাব নামে আমার এক মামা। যিনি গুলশানে থাকতেন। আর ইমাম হোসেন, যিনি ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের সায়েন্টিফিক অফিসার। তারা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। আর্থিক ও মানসিকভাবে। তাদের অবদান অনিস্বীকার্য।
জাগো নিউজ: শিক্ষক হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? আব্দুল হামিদ: আমি যেহেতু শিক্ষা ক্যাডারে আছি, শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের দেশে অনেক বাধা, প্রতিবন্ধকতাসহ নানা সংকট আছে। এগুলো পেরিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাই।
এসইউ/জিকেএস