দেশজুড়ে

স্বঘোষিত যোগ্য প্রার্থীদের পোস্টারে ভরেছে নোয়াখালী

পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করা হলেও নোয়াখালীর চারটি পৌরসভায় সরগরম প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তফসিল ঘোষণার আগেই পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলে ঘরোয়া সভা ও জনসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নোয়াখালী, চৌমুহনী, বসুরহাট, চাটখিল ও হাতিয়া পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও প্রতিষ্ঠানের সামনে শোভা পাচ্ছে স্বঘোষিত সৎ, যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীদের শুভেচ্ছা প্রদর্শিত পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড। তারা ভোটারদের শোনাচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতিক ভোট হওয়ার খবরে ইতোমধ্যে অনেকেই দল বদল করা শুরু করেছেন। স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিনে দেখা যায়, আগামী পৌসভা নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা না হলেও জেলার চারটি পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপক তৎপরতা। দলীয় সমর্থনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নতুন মাত্রা যোগ করেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণায়। তৃণমূল থেকে দলীয় হাইকমান্ড পর্যন্ত জোর লবিং করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালালেও দলীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকা বিএনপির প্রার্থীরাও গোপনে গুছিয়ে নিচ্ছেন তাদের প্রস্তুতি। পিছিয়ে নেই ভোটাররাও, প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটারদের আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠেছে নোয়াখালী, চৌমুহনী, বসুরহাট, চাটখিল ও হাতিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিসের আঙ্গিনা পর্যন্ত।১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নোয়াখালী পৌরসভার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় ভোটারের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার। এ পৌরসভার বর্তমান মেয়র জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ হারুনুর রশিদ আজাদ। আসন্ন পৌর নির্বাচনে এখানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত যুগ্ম সম্পাদক একেএম সামছুদ্দিন জেহান, কোষাধক্ষ্য ফখরুল ইসলাম মন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল হক বাহার, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যা খান সোহেল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মনিরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ হারুনুর রশিদ আজাদ, পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি সহিদুল ইসলাম কিরণ, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের।১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চৌমহনী পৌরসভা। বর্তমানে প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় পৌনে ২ লাখ জনসংসখ্যার মধ্যে ৪৫ হাজার ভোটার রয়েছেন। এ পৌরসভার মেয়র মামুনুর রশিদ কিরণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বেগমগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আক্তার হোসেন ফয়সাল মেয়র নির্বাচিত হন। আসন্ন পৌর নির্বাচনেও আক্তার হোসেন ফয়সাল সম্ভাব্য মেয়র পদ প্রার্থী। এছাড়া সাংসদ মামুনুর রশিদ কিরনের বড় ভাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসর প্রাপ্ত ডিজিএম খালেদ সাইফুল্ল্যাহ, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক টিপু, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজিজুল বাশার স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী শেখ শহিদ উল্যাহ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক বাদশার সহধর্মিনী শাহানাজ বেগম, জেলা বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো, মঞ্জুরুল আজিম সুমন (জিএস সুমন) আলোচনায় রয়েছেন।বসুরহাট পৌরসভায় নবীন প্রবীণের লড়াইয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। আওয়ামী লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার বর্তমান মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার নাম ঘোষণা হয়। তবে বিএনপি থেকে প্রার্থী চুড়ান্ত না হলেও গুঞ্জন রয়েছে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রিপনের প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত। যদিও কয়েকটি কিন্তু রয়েছে এতে। প্রথমত বিএনপি ভোটে যাবে কিনা। দ্বিতীয়ত, পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন চৌধুরী যদি প্রার্থী না হন। অপরদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকে মোশারফ হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে, প্রচার প্রচারণাও চলছে।বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্র মতে কামাল উদ্দিন চৌধুরী ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এবার নির্বাচন না করার ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের কাছে জানিয়ে দিয়েছেন। তার উত্তরসূরী হিসেবে মাহমুদুর রহমান রিপনের নামও প্রস্তাব করেছেন। যদি এই সম্ভাব্যতা শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে হবে নবীন প্রবীণের লড়াই। আব্দুল কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাহমুদুর রহমান রিপন নবীন হলেও দলীয় শক্তির বিবেচনায় তাকে একেবারেই ফেলে দেয়া যাবে না। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে রিপনের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। দলের কর্মীদের খোঁজখবর নেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিল দলের মাঝে প্রশংসনীয়। এ বিবেচনায় লড়াইটা জম্পেস হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। জামায়াতের উপজেলা সভাপতি মোশারফেরও ক্লিন ইমেজের কারণে জনপ্রিয়তা রয়েছে পৌরবাসীর কাছে।অপরদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আব্দুল কাদের মির্জার জনপ্রিয়তা হলো ঈর্ষণীয়। তাছাড়া, কোম্পানীগঞ্জে দলের কাণ্ডারিও তিনি। দলের মাঝে তাকে নিয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে নেতাকর্মীরা তাকে এক বাক্যে মেনে নেন। এছাড়াও পৌরসভার উন্নয়নে আব্দুল কাদের মির্জার ভূমিকা ব্যাপক। অনেকে আবার মনে করেন শুধু আওয়ামী লীগের মাঝে নয়, আব্দুল কাদের মির্জা সর্বস্তরে জনগণের মাঝেই জনপ্রিয়।     ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় চাটখিল পৌরসভা। এ পৌরসভায় ২০১০ সালের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ২০১৩ সালে তার মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জসিম উদ্দিনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত মোস্তফা কামাল। আসন্ন পৌর নির্বাচনে মোস্তফা কামাল ছাড়াও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আলোচনায় আছেন চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জাহাঙ্গীর, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন তফাদার, যুবলীগের আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন ও মোহাম্মদ উল্যাহ, আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান, বিএনপি নেতা দেওয়ান শামুল আরেফিন শামীন, আলা উদ্দিন ভূঁইয়া, আহসানুল হক মাসুদ, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এটিএম ফজলুল করিম বাচ্চু ও উপজেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ সাইফুল্ল্যাহ। এ পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার।নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ৩৫ বর্গকিলোমিটার নিয়ে হাতিয়া পৌরসভা গঠিত। ৯টি ওয়ার্ড ও তিনটি সংরক্ষিত আসন নিয়ে গঠিত হাতিয়া পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুইজন প্রার্থী মাঠে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলেন, বর্তমান পৌর মেয়র এ.কে.এম ইউছুফ আলী ও অ্যাডভোকেট ছাইফ উদ্দিন আহম্মেদ। অপরদিকে, বিএনপির প্রার্থী তালিকায় আছেন অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন।  বর্তমান পৌর মেয়র এ.কে.এম ইউছুফ আলী হাতিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র। তিনি আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা। বর্তমান সাংসদ আয়েশা ফেরদাউস, সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন ইতোমধ্যে ইউছুফ আলীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পৌরসভার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে তাকে পুনরায় ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী অ্যাডভোকেট ছাইফ উদ্দিন আহম্মেদ একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা মরহুম জিয়াউল হক তালুক মিয়া এক সময় হাতিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। মাঠ পর্যায়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় সহোদর ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ রয়েছেন। অ্যাডভোকেট ছাইফ উদ্দিন আহম্মেদ পৌরবাসীর পানি, বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের সমস্যা সমাধান কল্পে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। এদিকে তার বিরুদ্ধে হাতিয়া পৌরসভা মেয়রের উপর হামলা ও পৌর অফিস ভাঙচুরের একটি মামলা রয়েছে। অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন হাতিয়া পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হাতিয়া আইনজীবী  সমিতির সভাপতি। তিনিও ইতোমধ্যে গণসংযোগ চালিয়ে মাঠে একটি অবস্থান সৃষ্টি করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে রেহাই পেতে এবং আধুনিক পৌরসভা গড়তে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। এই তিন প্রার্থী গত পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং এ.কে.এম ইউছুপ আলীর কাছে অপর দুইজন পরাজিত হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় দুই প্রার্থীর মধ্যে কে মনোনয়ন পান তা এখনো নিশ্চিত নয়। মিজানুর রহমান/এমজেড/পিআর

Advertisement