শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বদলি হয়েছেন প্রায় তিন মাস আগে। তার কিছুদিন পরই বদলি হয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হায়দার আলী। কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার (আইসিটি) একেএম ফাওজুল করিম বদলি হয়েছেন তাদেরও অনেক আগে। কিন্তু শেরপুর জেলা প্রশাসনের আইসিটি কমিটিতে এখনও এদের নাম শোভা পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হায়দার আলী ও সহকারী কমিশনার (আইসিটি) একেএম ফাওজুল করিম জেলার ‘আইসিটি ইনোভেশন টিমে’ এখনও রয়েছেন। কাজীর গরুর মতো এসব কর্মকর্তা কিতাবে থাকলেও বাস্তবে তারা আর শেরপুরে কর্মরত নেই। কিন্তু শেরপুর জেলা তথ্য বাতায়নে জেলার তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি কমিটিতে তাদের নামই লেখা রয়েছে। সেটি আর হালনাগাদ করা হয়নি। (২২ নভেম্বর) রোববার শেরপুর জেলা তথ্য বাতায়নে প্রবেশ করে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। শুধু কি তাই! তথ্য বাতায়ন সংক্রান্ত যোগাযোগ ও পরামর্শ সংক্রান্ত পাতায়ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হায়দার আলী ও সহকারী কমিশনার (আইসিটি) একেএম ফাওজুল করিম ও সহকারী প্রোগ্রামার মঞ্জুরুল আলমের নাম, ছবি এবং ফোন নম্বর লেখা রয়েছে। সহকারী প্রোগ্রামার মঞ্জুরুল আলমের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, আমার বর্তমান কর্মস্থল নেত্রকোনা জেলায়। কালেক্টরেটের ওই দুই কর্মকর্তার মতোই অনেক আগেই তিনি শেরপুর থেকে বদলি হয়েছেন বলে জানান। এভাবেই হালনাগাদ তথ্যের অভাবে শেরপুর জেলা তথ্য বাতায়ন থেকে সেবাগ্রহীতাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। জেলা তথ্য বাতায়নে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সভার কার্যবিবরণী এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, এসব তথ্য হালনাগাদে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন গরজ নেই। এতে জেলা তথ্য বাতায়নের উদ্দেশ্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে। শেরপুর জেলা তথ্য বাতায়ন সার্চ করে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের মাসিক সম্ভাব্য ভ্রমণসূচিতে এখনও ঝুলছে আগস্ট/১৫ মাসের তথ্য। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত পাতায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মে/২০১৫ মাসের সভার কার্যবিবরণী পোস্ট করা হয়েছে। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভারও মে/২০১৫ মাসের কার্যবিবরণী দেয়া আছে। কিন্তু খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটির ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মাসিক সভার কার্যপত্র সর্বশেষ তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটির জানুয়ারি/১২ মাসের কার্যপত্র পোস্ট করা আছে। অথচ এসব কমিটির সভা প্রতিমাসেই নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও জেলা তথ্য বাতায়নে তার আপডেট পাওয়া যাচ্ছে না। নন্নী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম মোখলেছুর রহমান রিপন ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অনেক আগেই। তার মতোই চরঅষ্টাধর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুব আলী চৌধুরী নকলা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রোফাইলে তাদের নাম-ছবি থাকার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগে জেলার ৫২ ইউপি চেয়ারম্যানের তালিকায়ও তাদের নাম রয়েছে। অথচ তাদের ছেড়ে দেয়া পদে উপ-নির্বাচনে নতুন করে চেয়ারম্যান পদে পৃথক দু’জন নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তাদের হালনাগাদ তথ্য জেলা তথ্য বাতায়নে আজও স্থান পায়নি। শেরপুর জেলা তথ্য বাতায়নে প্রবেশ করে সরকারি অফিসসমূহের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ সুপার মো. মেহেদুল করিম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে মোহাম্মদ মুহিবুল ইসলাম খানের নাম ও ছবি রয়েছে। অথচ প্রায় ছয় মাস আগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুহিবুল ইসলাম খান নারায়নগঞ্জ জেলায় বদলি হয়েছেন। বর্তমানে মো. আব্দুল ওয়ারিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কোনো বর্ণনা কিংবা পরিচিতি জেলা তথ্য বাতায়নে নেই। কর্মকর্তা হিসেবে আরও দু’জন সহকারী পুলিশ সুপার জেলায় কর্মরত থাকলেও তাদের কোনো তথ্য সেখানে নেই।অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ পদোন্নতি পেয়ে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পরিচালক হয়ে বর্তমানে ঢাকা খামারবাড়ীর পরিচালক হয়েছেন। কিন্তু তার নাম-ছবি এবং বর্ণনা এখনও শেরপুর জেলা তথ্য বাতায়নে উপ-পরিচালক হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে। তার সময়কার শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ বিলাস চন্দ্র পাল নেত্রকোনা জেলার উপ-পরিচালক এবং তৎকালীন উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফজলুল হক সানী ঢাকা খামারবাড়ীতে উপ-পরিচালক পদে প্রায় এক বছর আগে পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়েছেন। তাদের নাম এখনও জেলা তথ্য বাতায়ন শেরপুরে কর্মরত দেখা যাচ্ছে। অথচ বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে উপ-পরিচালক, জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পরিচালক পদে যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।শেরপুর জেলা থেকে গত ৪ মাস বা তারও আগে বদলি হয়েছেন এমন কর্মকর্তাদের মধ্যে সিভিল সার্জন ডা. নারায়ণ চন্দ্র দে, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাক্কা জাহের, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান, গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোর্শেদ হোসেন, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তালিম উদ্দিন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান প্রমুখ কর্মকর্তা। কিন্তু জেলা তথ্য বাতায়নে এদের ছবিসহ প্রোফাইল এবং মোবাইল ফোন নম্বর এখনও শোভা পাচ্ছে। অথচ ওইসব বিভাগের বর্তমান কর্মকর্তাদের সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য না থাকায় তাদের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অনেককেই বিব্রত হতে হচ্ছে। শেরপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কালের ডাক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মো. শরিফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অনেক সময় তথ্য বাতায়নে নম্বর দেখে কোনো কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি তো ভাই বদলি হয়ে এসেছি। আপনি অফিসে যোগাযোগ করেন। এভাবে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। আমার মতো অনেকেই এমন বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছেন। জেলা তথ্য বাতায়নে সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য থাকা বাঞ্চনীয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা একটু মনোযোগ দিলেই এটা আপডেট হতে পারে। এ ব্যাপারে একজন সহকারী প্রোগ্রামার জাগো নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের আইসিটি শাখা কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একটু ইনিশিয়েটিভ নিলে জেলা তথ্য বাতায়নের তথ্য আপডেটেড করা কোনো ব্যাপারই না। এজন্য তাদের ইচ্ছাই যথেষ্ট। তথ্য বাতায়নের দিকে কর্মকর্তাদের নজরটা আরেকটু বাড়ালেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।এ বিষয়ে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অঞ্জন চন্দ্র পাল জাগো নিউজকে বলেন, জেলা পর্যায়ের অফিসগুলোকে জেলা তথ্য বাতায়নের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন তথ্য আপডেট করার জন্য ‘পার্সোনাল আইডি পাসওয়ার্ড’ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা সেটা না করায় অনেক ক্ষেত্রে পুরনো তথ্য জেলা তথ্য বাতায়নে দেখা যেতে পারে। তারা তাদের তথ্য আপডেট না করলে আামদের আসলে করার কিছু নেই।তিনি আরও বলেন, গত মাসে একটি সভায় জেলার বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে তাগাদাও দেয়া হয়েছে। তারপরও বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক পর্যায়ে তিনি আইসিটি শাখার সহকারী কমিশনারকে তার কক্ষে ডেকে আনেন এবং এ প্রতিবেদকের নিকট থেকে তথ্য বাতায়নের কি কি তথ্য আপডেট নেই তা জেনে দ্রুত আপডেট করার নির্দেশ দেন। কালেক্টরেটের আইসিটি শাখার সহকারী কমিশনার মাসুদ রানা জাগো নিউজকে জানান, আগে যারা আইসিটি শাখায় সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে ছিলেন তারা জেলা তথ্য বাতায়নের বিষয়গুলো দেখতেন। এখন সহকারী প্রোগ্রামারদের উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আইসিটি শাখায় প্রোগ্রামার নিয়োগ দেয়া হয়েছে তবে এখনও তারা যোগদান করেননি। তবে আশা করছি, দুই/একদিনের মধ্যেই জেলা প্রশাসনের সকল তথ্য আপডেট করা হবে। এসএস/পিআর
Advertisement