ক্যাম্পাস

ইবির পরতে পরতে বঙ্গবন্ধু

মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শ বুকে লালন করে এগিয়ে চলছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একরের প্রতিটি প্রান্তে দেখা মিলবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির চিহ্ন ও আদর্শের ছাপ। শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে উজ্জীবিত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব আয়োজন।

Advertisement

মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ডায়না চত্বরে স্থাপিত হয়েছে নান্দনিক শিল্পকলার এক অনন্য নিদর্শন ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরাল। ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ এটি উদ্বোধন করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, এটিই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। এই ম্যুরালটি এতটাই দৃষ্টিনন্দন যে, তা গুগল সার্চে শীর্ষে রয়েছে।

খোদাই করা পাথর ও টাইলসের তৈরি মুর্যালটির মূল স্থাপনার দৈর্ঘ্য সিঁড়িসহ ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮ ফুট। বেদির উচ্চতা ৫ ফুট। বেদির ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দৈর্ঘ্য ২৬ ফুট এবং প্রস্থ ১৭ ফুট। এর তিনটি সিঁড়ি রয়েছে। স্থাপনার তিন দিকে চলাফেরার জন্য ১৫ ফুট চওড়া জায়গা রয়েছে।

Advertisement

মূল প্রতিকৃতির ডানপাশে ৪ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট উচ্চতার একটি দেয়াল রয়েছে। যেখানে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত একটি ইংরেজি বাণী লিপিবদ্ধ করা। এই বাণীর ঠিক নিচেই রয়েছে বাংলায় অনুবাদ। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জালাল উদ্দীন তুহিনের যৌথ অর্থায়নে ম্যুরালটি নির্মিত হয়েছে। নকশা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক।

বঙ্গবন্ধু কর্নার

শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে উজ্জীবিত রাখতে এবং তার সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নিচতলায় বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী এটি উদ্বোধন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে কর্নারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন লেখকের প্রায় ৩১০টি বই স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে সাবেক উপাচার্য ড. রাশিদ আসকারী ৬৪ টি বই উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এছাড়া ২৪৬টি বই গ্রন্থাগার থেকে সরবরাহ করা হয়েছে।

Advertisement

এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছরের বিজয় দিবসে শেখ হাসিনা হলের সেমিনার লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করা হয়। খালেদা জিয়া হলেও বঙ্গবন্ধু লাইব্রেরি উদ্বোধন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু চেয়ার

জাতির পিতাকে নিয়ে পঠন-পাঠন ও উচ্চতর গবেষণার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৫তম সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ার সংক্রান্ত একটি নীতিমালা অনুমোদিত হয়। ওই চেয়ারে অধ্যাপক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ১৯ মে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। আবেদনের ভিত্তিতে বাংলা একাডেমির সাবেক মহা পরিচালক ও বর্তমান জাতীয় জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানকে মনোনীত করেন সিন্ডিকেট। ওই বছরের ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪২তম সিন্ডিকেট সভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু চেয়ারের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছরের জন্য তাকে এই পদে মনোনীত করা হয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল

১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ প্রান্তে প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক ছাত্র হল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আয়তনে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে বড় আবাসিক ছাত্র হল। এখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মোট আটটি ব্লক রয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্লকটি রয়েছে হলের পূর্ব প্রান্তে।

২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর হলের সম্মুখে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বাংলাদেশের মানচিত্র স্থাপিত হয়। যার মোড়ক উন্মোচন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম আলাউদ্দিন। হলের উত্তর পাশে রয়েছে দুটি সিঁড়ি বিশিষ্ট বিশাল জলাধার।

‘শাশ্বত মুজিব’ ও ‘মুক্তির আহ্বান’ ম্যুরাল

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতবছর বঙ্গবন্ধু হলের সম্মুখে দুটি ম্যুরাল উদ্বোধন করা হয়। ম্যুরালগুলোর একটি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবি সংবলিত ‘মুক্তির আহ্বান’ আর অন্যটি মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে ‘শাশ্বত মুজিব’।

২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ম্যুরাল স্থাপনের নিমিত্তে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে হলের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রভোস্ট অধ্যাপক তপন কুমার জোয়াদ্দার। অন্যদিকে স্বাক্ষর করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক। পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ম্যুরাল দুটি।

‘মুক্তির আহ্বান’ ম্যুরালটি ৩*১২ ফুট বিশিষ্ট মঞ্চের উপর ভাষণসহ ২০*১১ ফুট দূরত্বে অবস্থিত। ম্যুরালটিতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সাদা পাথরে লেখা আছে। তার পাশেই ৭ মার্চের সেই ভাষণের আদলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি।

এছাড়া দুটি বাণীসহ ১২*১৫ ফুট দূরত্বে ‘শাশ্বত মুজিব’ ম্যুরালটি অবস্থিত। এ চিত্রকর্মটি বিভিন্ন রঙের মূল্যবান পাথর দ্বারা অসাধারণ কারুকার্যে খোদাই করা হয়েছে। ম্যুরালের দুপাশেই রয়েছে খোদাইকৃত দুটি অমিয় বাণী।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর তনয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল’, তার সহধর্মির্ণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে ‘শেখ রাসেল হল’ এবং জামাতা এস ওয়াজেদ আলীর নামে ‘পরমাণু বিজ্ঞানী এস ওয়াজেদ আলী বিজ্ঞান ভবন’ রয়েছে।

রায়হান মাহবুব/এসজে/এমকেএইচ