নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে এখন মুখরিত সিরাজগঞ্জ। বিশেষ করে শস্য ভাণ্ডার খ্যাত চলন বিলে নতুন ধান কাটার উৎসব শুরু হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন না হলেও আবাদ সন্তোষজনক হওয়ায় চাষিদের চোখে মুখে এখন আনন্দের ছটা। ধান গোলায় তোলার জন্য শুধু কৃষক নয়, কৃষাণীরাও এখন দিন-রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে ধানকাটার সঙ্গে জড়িতরাও দিনভর কাজ করছেন। ধানকাটাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এখন চলছে উৎসবের আমেজ। তবে ধানের দাম কি হবে এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। নতুন ধান তোলা উপলক্ষে নিশ্চুপ গ্রামগুলো এখন সরব হয়ে উঠেছে। মাঠে মাঠে ধান পাকায় তা কেটে এখন গোলায় তোলার সময়। সকাল থেকেই শুরু হয় ধান কাটা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ধানকাটা শ্রমিকরা ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জে এসেছেন। বিশেষ করে চলন বিল এলাকায় এই সকল ধান কাটা শ্রমিকদের এখন খুবই কদর। চলনবিল এলাকায় মাঠের পর মাঠ জুড়ে এখন চলছে ধান কাটা। পুরুষদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। ধানকাটা শেষ হলেই নবান্ন উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি এলাকায় ধান কাটা, মাড়াই, ও গোলা ভরার কাজ চলছে জোড়েসোরে।সরেজমিনে চলনবিল এলাকার তাড়াশ উপজেলার উত্তর সারুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধু সোনালী রংয়ের পাকা ধান। অনেক জমির ধান কৃষক ও শ্রমিকরা কাটছেন। ধান কাটার ফাকে ফাকে তারা মনের সুখে গানও গাইছেন। কাটা ধান আঁটি বেঁধে তা মাথায় তুলে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেবার কাজও চলছে। কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কেটে আনা ধান মেশিনে মাড়াইয়ের কাজ করা হচ্ছে। আগে পুরুষরা শক্ত কাঠের উপর আছড়িয়ে গাছ থেকে ধান মাড়াই এর কাজ করতেন। তবে এখন বাড়ির কৃষাণীরাই মেশিনের দ্বারা এই কাজ করছেন। উত্তর সারুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বাসেদ জাগো নিউজকে জানালেন, এবারে তিনি ২৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। ধানের আবাদ ভালো না হলেও সন্তোষজনক ফলন হয়েছে। ফলন যা হয়েছে তাতে তিনি বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন।একই এলাকার ধানকাটা শ্রমিক আব্দুল ওয়াদুদ জাগো নিউজকে জানালেন, এসময়ে তাদের কদর খুব বেশি থাকে। বছরে দুবার ধানের আবাদের সময় তাদের ডাক পড়ে। বাকি সময় তিনি বাড়িতে বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করেন। তবে ধান কাটার কাজ অনেক লাভবান হবার কারণেই তিনি প্রতি বছর এই কাজ করেন।একই এলাকার শ্রমিক সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানালেন, চুক্তিতে তিনি ধান কাটছেন। প্রতি বিঘার ধান কেটে তিনি পাবেন পাঁচ মণ ধান। এতে এই মৌসুমের ধান কাটা শেষ করে অন্তত ছয় মাসের চালের খরচ তুলতে পারবেন বলে আশা করেছেন। চলতি মৌসুমের ধান কাটার কাজ শেষ করতে পারলে তিনি পরিবার নিয়ে শান্তিতেই দিনাতিপাত করতে পারবেন বলে আশা করছেন। রায়গঞ্জ উপজেলার বাইখোলা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, এবারে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছেন বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান পাবেন। এই ধান পেলে পরিবারের সারা বছরের চালের যোগান দিয়ে কিছু ধান তিনি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। চলনবিল খ্যাত গুলটা গ্রামের কৃষক বুলবুল জাগো নিউজকে জানান, এবারে তিনি যে আবাদ করেছেন তাতে বেশ কয়েকশ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন। তবে গতবারের মতো ধানের দাম থাকলে এই ধান পেয়ে কোনো কাজে আসবে না। ধানের সঠিক মূল্য না পেলে ধানের আবাদ করাই বাদ দিতে হবে বলে তিনি জানালেন। তিনি সরকারের কাছে ধানের সঠিক মূল্য প্রদানের জন্য দাবি করলেন। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রায়পুর গ্রামের ধানের উৎপাদনকারী মাহমুদুল কবীর জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা মণ ধানের মূল্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে ৩শ থেকে ৪শ টাকা খরচ হয়েছে। এবারের আবাদে একশ মণ ধান পাবেন বলে তিনি মনে করছেন। এই মূল্য থাকলে এবারের আবাদ থেকে বেশ মুনাফা পাবেন বলেও জানান। রায়গঞ্জ উপজেলার ধানের চাতাল মালিক আব্দুস সামাদ জাগো নিউজকে জানান, ইতোমধ্যে নতুন ধান চাতালে আসতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও নতুন চালের বেশ চাহিদা রয়েছে। দিনভর নতুন ধান থেকে চাল তৈরি করা হচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ধানের আবাদ বেশ ভালো বলে তিনি মনে করছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওমর আলী শেখ জাগো নিউজকে জানান, এবারে জেলার ৫৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কৃষকরা ৬৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। এবারে ধানের আবাদও বেশ ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতি হেক্টর জমির নতুন ধান থেকে থেকে ২ পয়েন্ট ৯ টন চাল উৎপাদন করা হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ধরে নেয়া যায় এবারে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা যদি ধানের সঠিক মূল্য পান তাহলে আগামীতে ধানের আবাদ আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। এমজেড/এমএস
Advertisement