আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিতে কানাডায় জাতীয় ছুটি ঘোষণা করতে সিনেটে বিল এনেছেন দেশটির সিনেটর মবিনা জাফর।
Advertisement
বহুসংস্কৃতির দেশ কানাডায় অভিবাসীদের মাতৃভাষার স্বীকৃতি এবং গুরুত্ব সম্পর্কে কানাডিয়ানদের সচেতন করে তুলতেই বেসরকারি বিল হিসেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কানাডায় ছুটি ঘোষণার জন্য বিলটি এনেছেন বলে তিনি জানান।
আগামী সপ্তাহে সিনেটে বিলটি নিয়ে আলোচনার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে বলে আশা করছেন মবিনা জাফর।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’ বিলটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনাকালে বিলটির স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সহযোগিতা চান এই সিনেটর।
Advertisement
সোমবার (১৫ মার্চ) দুপুরে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় সিনেটর মবিনা জাফর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কানাডায় ছুটি ঘোষণার বিল আনার প্রেক্ষাপট বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, তিনি যেহেতু বেসরকারি বিল হিসেবে এটি সিনেটে পেশ করেছেন, সিনেটররা এর ওপর তাদের মতামত দেবেন। পরে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে। সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে এটি তৃতীয় রিডিংয়ের জন্য আবার সিনেটে আসবে। তৃতীয় রিডিংয়ে অনুমোদন পেলে এটি বিল হিসেবে হাউজ অব কমন্সে যাবে।
সিনেটর মবিনা জাফর বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রত্যেকেই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে চিঠি লিখে এই বিলটিকে সমর্থন দিতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তাদের বলুন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিলটি তোলার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিনেটর মবিনা জাফর বলেন, অভিবাসী হয়ে কানাডায় আসার পর পরই আমরা বাস্তবিক অর্থেই মাতৃভাষাকে হারিয়ে ফেলি। একজন মানুষ যদি তার মাতৃভাষা হারিয়ে ফেলে, সে আসলে তার আত্মপরিচয়কেই হারিয়ে ফেলে, সে তার ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলে। আত্মপরিচয়কে সমুন্নত রাখা আমার কাছে জরুরি। সে কারণেই আমি এই বিলটি তুলেছি।
তিনি বলেন, এর আগেও আমি এই ব্যাপারে বিল এনেছিলাম। সেই সময় বিলটি কমিটিতে যায় এবং কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলা অবস্থায় দেশে নির্বাচন এলে সেটা আর এগোয়নি। তিনি আশাবাদী এবার অন্তত বিলটি ইতিবাচক গতি পাবে।
Advertisement
উগান্ডায় বেড়ে ওঠা মবিনা জাফর বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাস এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সম্পর্কে নিজের উচ্চ ধারণা তুলে ধরে বলেন, তার বাবা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে প্রচুর গল্প করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামের কথা বলতেন।
বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে লিবারেল পার্টি থেকে মনোনীত সিনেটর মবিনা জাফর বলেন, সরকার যে এই বিলের খুব একটা পক্ষে বিষয়টা এমন না। ফলে এ নিয়ে আমাকে অনেকটা অসম লড়াই করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি কিংবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ছুটি ঘোষণাকে অনেকেই বাইলিঙ্গোয়ালিজমের জন্য ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু আমি সেভাবে ভাবি না। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি কানাডার বাইলিঙ্গোয়ালিজমকে বরং শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন, নিজের মাতৃভাষার জন্য অকুণ্ঠ ভালোবাসা থাকলে সেটি আরও ভাষা জানার ব্যাপারে উৎসাহী করে তোলে।
‘নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কানাডায় ছুটি ঘোষণার জন্য সিনেটে বিল উত্থাপন করায় মবিনা জাফরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাঙালির ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়েই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণা হয়েছে। তিনি, সিনেটে পেশ করা মবিনা জাফরের বিলটিতে রেফারেন্স হিসেবে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ঘটনা সংযুক্ত করার আহ্বান জানান।
এমআরআর/জেআইএম