দেশে এক যুগে মাছের উৎপাদন ৬২ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে সার্বিক মাছের উৎপাদন বছরে ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার টন। এর অর্ধেকেরই বেশি অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ের মাছ। অর্থাৎ খাল, বিল ও পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে এসব মাছের চাষ হয়েছে।
Advertisement
মৎস্য অধিদফতর বলছে, বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষেই ব্যাপক সফলতা এসেছে। যদিও আশির দশকে দেশে উৎপাদিত মাছের দুই-তৃতীয়াংশই মুক্ত জলাশয় থেকে আহরণ করা হতো। অর্থাৎ নদী-নালায় প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হতো। বর্তমানে মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণ মোট উৎপাদিত মাছের এক-চতুর্থাংশে নেমেছে।
তথ্য বলছে, দেশে আশির দশকে মুক্ত জলাশয় থেকে ৬২ দশমিক ৫৯ শতাংশ মাছ আহরণ করা হতো। এখন হচ্ছে মাত্র ২৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে বদ্ধ জলাশয়ে (খাল, বিল ও পুকুরে বাণিজ্যিক চাষ) মাছের চাষ হচ্ছে ৫৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা আশির দশকে ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বাকিটা সামুদ্রিক মাছ। দেশে এখন ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ মাছের সরবরাহ আসে সমুদ্র থেকে, যা আশির দশকে ছিল ২১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ বদ্ধ জলাশয় ছাড়া জলাশয় ও সামুদ্রিক আহরণ— উভয়ই কমেছে।
মৎস্য অধিদফতর বলছে, অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে চাষের এ উল্লম্ফনই মাছ উৎপাদনে বড় সফলতা এনেছে। সার্বিকভাবে দেশে মাছের উৎপাদন ২০০৮-০৯ এর পর এক যুগে ৬২ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে দেশে সার্বিক মাছের উৎপাদন ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার টন, যা এক যুগ আগে ২৭ লাখ ১ টন ছিল।
Advertisement
মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ জাগো নিউজকে বলেন, মাছের জাত সম্প্রসারণ, মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরির সুফল মিলছে। দেশে বিগত এক যুগে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন মৎস্য চাষিরা। পাশাপাশি পাঙ্গাশ, কৈ, শিং, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছের উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। এখন কেউ কোনো পুকুর খাল অব্যবহৃত রাখছেন না। সবখানেই মাছের চাষ হচ্ছে। সবমিলিয়ে মাছের উৎপাদন প্রচুর বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সব জেলায়ই মাছের কম-বেশি চাষ হলেও বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষের ক্ষেত্রে ময়মনসিংহের অবদান সবচেয়ে বেশি। জেলাটিতে মাছ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় চার লাখ টন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যশোর। এ জেলায় বছরে প্রায় তিন লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। তৃতীয় শীর্ষ জেলা কুমিল্লায় আড়াই লাখ টন মাছ উৎপাদন করা হয়।
অর্থাৎ সার্বিক উৎপাদনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মাছই উৎপাদন হচ্ছে এ তিন জেলায়। ব্যক্তি-উদ্যোগের পাশাপাশি বড় কয়েকটি করপোরেট গ্রুপও এখন জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বৃহৎ পরিসরে মাছের উৎপাদন শুরু করেছে, যা দেশের উৎপাদনে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে বাজারজাত ব্যবস্থার উন্নয়নসাধন এবং উন্নত জাতের পোনা সরবরাহ করা গেলে দেশের খামারগুলোয় মাছের উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারও এ বছর মাছের উৎপাদন ৫০ লাখ টন ছাড়িয়ে নিতে কাজ করছে।
Advertisement
মৎস্য চাষিরা বলছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় গুণগত ও মানসম্পন্ন মাছ আমদানি করে বেসরকারি খাতে সরবরাহ করলে মাছের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া ফিশ ফিডের দামও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মৎস্য চাষিদের ঋণসহায়তা আরও বাড়ালে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা আগ্রহী হবেন বেশি।
এনএইচ/এএএইচ/এইচএ/জেআইএম