দেশের প্রথম রেডজোন চিহ্নিত এলাকা কক্সবাজারের সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি না মানার হিড়িক পড়েছে। সম্প্রতি উপসর্গহীন বেশ কয়েকজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় আবারও এ জেলায় করোনার ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে পর্যটক ও স্থানীয়রা মিলে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের আগমন ঘটে। ছুটির দিন পর্যটকদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কারোই মুখে মাস্ক দেখা যায় না। সামাজিক দূরত্বের বদলে গা ঘেঁষে একই স্থানে ভিড় করেন পর্যটকরা। এছাড়া সরকারি অফিস, পর্যটন স্পট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বালাই নেই। সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা মাস্ক না পরার পক্ষে নানা অজুহাত দেখাচ্ছে।
সৈকতে পর্যটক সেবায় থাকা সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরা ও নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিতে সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে হ্যান্ডমাইকে প্রচারণা চালানো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ পর্যটক মাস্ক পরা বা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন না। উল্টো জরিমানার ভয়ে মুখে দিয়ে নামা সার্জিকেল মাস্কগুলো বালিয়াড়িতে ফেলে যায়।
অপরদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টেও আগের মতো কড়াকড়ি নেই। একই অবস্থা জেলার সব পর্যটন স্পটে।
Advertisement
চট্টগ্রামের কাজির দেউরি থেকে ভ্রমণে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, মাস্ক পরলে নিজেকে ডাকাত ডাকাত লাগে। এখন আর মাস্ক পরতে ইচ্ছে করে না।
গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে আসা ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, মাস্ক পরা জরুরি। তবে ভ্রমণের সময় মাস্ক পরলে উপভোগ করা যায় না। ছবিতেও বাজে দেখায়।
ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে আসা রাফিয়া আক্তার বলেন, মেয়েদের মাস্ক পরা বিব্রতকর। তার মতে, মাস্ক পরলে মেকআপ এবং লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যায়। করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক ছাড়া তিনি অন্যসব মেনে চলেন বলে জানান।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাসহ ৩৫ লাখ মানুষের বাস। এ পর্যন্ত জেলার ৭০ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছে। ভ্যাকসিন প্রতিরোধে কাজ করছে ৭৫ শতাংশ। দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে টিকা কাজ করছে না। কিন্তু একটি মাস্ক ৯৫ শতাংশ করোনা প্রতিরোধে সক্ষম, যদি অন্যান্য নির্দেশনা মেনে চলা হয়।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত টানা তিন মাস দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে করোনা। এবারও একই সময়ের মধ্যে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। কক্সবাজারে সর্বত্রই যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে পড়ছে তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
কক্সবাজারে দুই শতাধিক করোনা রোগীকে স্বেচ্ছায় সেবা দেয়া বেসরকারি হাসপাতালের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে। কয়েক দিন ধরে করোনা রোগীর ফোন বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে আবারও করোনার ধাক্কা আসছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে প্রতিনিয়ত মাইকিংসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে সবার উচিত সুরক্ষা নিশ্চিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটক ও স্থানীয়দের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক প্রচার ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সতর্ক বার্তা জেলা প্রশাসনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।
এএইচ/এএসএম