দেশজুড়ে

ভারতের পথে লালমনিরহাটের ১৩০ জন

কন কনে শীতের কুয়াশা ভেদ করে প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত বাঁশকাটা ছিটমহলে। অন্যান্য দিন আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামটি যেন ফিরে পায় প্রাণচাঞ্চল্য। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠে এখানকার বাসিন্দারা। কিন্তু আজ সূর্যোদয়ের পর পরই সেখানে ভিড় করছে বিষাদ।পুরো গ্রামের মানুষ নিজেদের কাজ ফেলে জড়ো হতে থাকেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। যারা ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ফেলে চলে যাচ্ছেন নিজেদের দেশে। তাই যারা ভারতে যাচ্ছেন তাদের বাড়ি ছাড়াও পুরো গ্রামটিতে পড়েছে কান্নার রোল। তাদের কান্নার শব্দে গোটা এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।এরপরও যেহেতু তারা কাঁটাতারের ওপারে থাকা নিজেদের মূল ভূখণ্ডে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাই কষ্টের মাঝেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা গাড়ি ধরতে হবে সকাল সকাল। ফলে নিজের পোশাক-আশাক, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ছেড়ে যান নিজের জন্মভিটা। এ সময় একজন আরেকজনকে উপহারও তুলে দেন। কেউ কেউ আবার সঙ্গে নিয়ে বের হন নিজের পোষা গরু বা ছাগলের মতো গবাদি পশুও। পাটগ্রামের সরকারের হাট থেকে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের মালপত্র বোঝাই ট্রাক ও তাদের বহনকারী বাসগুলো যখন বুড়িমারী স্থলবন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে শুরু করে ঠিক তখন কান্নার শব্দ আরও বেড়ে যায়। বাসের ভেতরে থাকা সকলেই একদিকে যেমন সমস্বরে কাঁদতে থাকেন তেমনি বাসের বাইরে থাকা শত শত মানুষও নিজেদের চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারেন না। তবুও এরই মাঝে নিজেদের দেশের পথে রওনা হন পাটগ্রাম উপজেলার ভেতরে থাকা সদ্যবিলুপ্ত ১১২, ১১৫ ও ১১৯ বাশঁকাটা এবং ১১৫ খড়খড়িয়া ছিটমহলের ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারীরা। সদ্যবিলুপ্ত ১১৯ বাশঁকাটার উকিল বর্মন জাগো নিউজকে জানান, ধরলা নদীতে চার বার বাড়ি ভাঙনের কারণে আজ নিঃস্ব হয়ে ভারতে চালে যাচ্ছি। এ দেশে জায়গা জমি না থাকায় সপরিবারে নতুন ঠিকানায় যাচ্ছি। জন্মভূমি ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।বিউটি রানী জাগো নিউজকে জানান, এক বছর হলো আমার বিয়ে হয়েছে। বাবা, মা, ভাই-বোনকে ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে ভারতে যেতে হচ্ছে।লালমনিরহাটের পাটগ্রামের চারটি বিলুপ্ত ছিটমহলের ৩০ পরিবারের ১৩০ জন আজ ভারত যাচ্ছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই উপজেলার ১১৪ লতামারীর একটি এবং হাতীবান্ধার ১৩৫ ও ১৩৬ নম্বর গোতামারী ছিটমহলের ১৭টি পরিবারের ৬২ জন বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরেছেন। গত বৃহস্পতিবারের মতো আজও এসব মানুষ নিজেদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে পুরো এলাকায় পড়ে কান্নার রোল। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে এসব মানুষকে দেশটির কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়িতে তৈরি অস্থায়ী ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়া হবে। রবিউল হাসান/এসএস/এমএস

Advertisement